Saturday, September 11, 2021

সৌরভ দেবনাথের ঈর্ষা

 

Suvendu Debnath

8 সেপ্টেম্বর, 4:36 PM-এ 
ইদানিং বছর পাঁচেক বাংলা সাহিত্যের বাজারে নতুন এক ট্রেন্ড হয়েছে। আর তা হল কুৎসা করা। জীবিত এবং মৃত ব্যক্তিদের নিয়ে। আর এটা পাঠক লেখক দুপক্ষই করে থাকেন।খুব সহজ হচ্ছে মৃতদের ছাল ছাড়ানো, এ ক্ষেত্রে প্রতিরোধ আসার সম্ভবনা নেই। সমস্যা জীবিতদের ক্ষেত্রে। সে ক্ষেত্রে প্রতিরোধের সম্ভাবনা তো আছেই, পাশাপাশি বিরোধী পক্ষ প্রবল হলে উল্টে কুৎসাকারীর ছাল ছাড়ানো হয়ে যেতে পারে।
আমি বুঝি না (হয়ত আমার অক্ষমতা) যে ওমুকে লিখতে পারে না, তমুকে ধামাধরা, ও ওই বিখ্যাত কবির সঙ্গে শুয়ে লেখা ছাপিয়েছে বা তেল দিয়ে পুরস্কার পেয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি এসব কথা বলে কী লাভ হয়। হয় আমার ইচ্ছে ছিল কিন্তু আমি তেল দিতে পারিনি বা শুতে পারিনি, আর না হলে আমি এসবের প্রবল বিরোধী। আমার মোটা মাথায় যেটুকু ঢোকে তা হল আমি যদি এসব পছন্দ না করি, আমি নিজের লেখা বা পড়া নিয়ে থাকব, বাকিটা পাঠক বুঝে নেবে। লিখতে না জানলে পাঠক ছুঁড়ে ফেলবে, আর আমি যদি পাঠক হই, ভাল না লাগলে আমি পড়ব না। আর আমি যদি লেখক হই তাহলে নিজের লেখা নিয়ে ভাবব, নিজের লেখা লিখব, বাকিটা প্রকাশক আর পাঠকের হাতে ছেড়ে দেব।
আমার একটাই প্রশ্ন বাকিরা কী করেছে, লিখতে পারে কিনা এইসব নিয়েই যদি ভাবব, লিখব, তাহলে নিজের লেখাটা নিয়ে ভাবব, লিখব কখন? আর তা না করলে আমিও তো জালি লেখাই লিখব আর বসে থাকব কার সঙ্গে শোব বা তেল দেব, যাতে সেটা ছাপা হয় বা পুরস্কার পায়। তাহলে যাদের নিয়ে কুৎসা করছি তাদের আর আমার মধ্যে আলাদা কী রইল?
আর একটা ট্রেন্ড মৃত জনপ্রিয় ব্যক্তির নাম ভাঙিয়ে কুৎসা করে লেখা যাতে বই বিক্রি হয়। বছর কয়েক আগে মলয় রায়চৌধুরি আমাকে ইনবক্স করেছিলেন “আমার পরবর্তী উপন্যাসের নাম রাহুকেতু। কেন্দ্রীয় চরিত্রে সুনীল-শক্তি। প্রকাশ করবে আখর। জানতে হলে পড়তে হবে।” মানে এভাবে যদি বই বেচতে গিয়ে সুনীল,শক্তি, জয় বা বাকিদের হাতিয়ার করতে হয় তাহলে ধরেই নিতে হবে লেখক মৃত। নিজের কলমের প্রতি পাঠক তো দূর তাঁর নিজেরই আর ভরসা নেই। এটা করেই তিনি ছাপার বা পুরস্কারের বৈতরণী পার হতে চাইছেন। সেক্ষেত্রে তিনি যাদের নিয়ে কুৎসা করছেন, তাদের থেকে আরও খারাপ এবং ক্ষতিকারক তিনি। অন্তত আমার তো তাই-ই মনে হয়। এই ট্রেন্ডটার উদ্দেশ্য প্রতিবাদ করা নয়, বরং বিতর্ক তৈরি করে মানুষের নজরে আসার মরিয়া এবং ব্যর্থ চেষ্টা।