কবিতা আন্দোলন, শ্রুতি আন্দোলন, হাংরি জেনারেশন, স্যাড জেনারেশন, এংরি জেনারেশন ঐতিহাসিক ও সামাজিক অভীপ্সা থেকে লক্ষ্য করলে এ সমস্ত আন্দোলনের কোন উৎসভূমি পাওয়া যায় না। এর কোন ইস্তেহার নেই; যে সমাজে বড় ধরনের কোন অসংগতির কারণে আন্দোলনগুলো কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে নতুন স্বপ্ন ও জাগরণে ভূমিকা রাখতে পারে। এসব কারণ পর্যালোচনা করলে বাংলা কবিতার ঊনিশ শতকীয় দর্শনে কেবল উঠে আসে ক্লেদ বিবমিষা হতাশা ও ক্লান্তি। বিগত পঞ্চাশ বছর আমাদের অনুভূতি ও মেধাকে শোষণ করেছে। পরান্নভোজী ও অধীনস্থ করে রাখা হয়েছে। যাতে বাঙালি না জাগে স্বপ্নে ও সীমানায়, রাষ্ট্রে ও দর্শনে।
Sunday, November 18, 2018
রিজোয়ান মাহমুদ ( বাংলাদেশ ) -এর ঈর্ষা
কবিতা আন্দোলন, শ্রুতি আন্দোলন, হাংরি জেনারেশন, স্যাড জেনারেশন, এংরি জেনারেশন ঐতিহাসিক ও সামাজিক অভীপ্সা থেকে লক্ষ্য করলে এ সমস্ত আন্দোলনের কোন উৎসভূমি পাওয়া যায় না। এর কোন ইস্তেহার নেই; যে সমাজে বড় ধরনের কোন অসংগতির কারণে আন্দোলনগুলো কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে নতুন স্বপ্ন ও জাগরণে ভূমিকা রাখতে পারে। এসব কারণ পর্যালোচনা করলে বাংলা কবিতার ঊনিশ শতকীয় দর্শনে কেবল উঠে আসে ক্লেদ বিবমিষা হতাশা ও ক্লান্তি। বিগত পঞ্চাশ বছর আমাদের অনুভূতি ও মেধাকে শোষণ করেছে। পরান্নভোজী ও অধীনস্থ করে রাখা হয়েছে। যাতে বাঙালি না জাগে স্বপ্নে ও সীমানায়, রাষ্ট্রে ও দর্শনে।
উদয়ন ভট্টাচার্যের ঈর্ষা
হাংরি আন্দোলনের ব্যাপারটা আমার কাছে আজও এক আরোপিত প্রচেষ্টা মনে হয়। বিদেশের যে অ্যাংরি জেনারেশনের অনুকরণে হাংরির জন্ম, তার মূলে ছিল পশ্চিমি বৈভবের ফলে সব সহজে পেয়ে যাওয়ার এক মানসিক ক্লান্তি -- যার চূড়ান্ত প্রকাশ, 'মানি কান্ট বাই মি লাভ'-এ। সেই অ্যাঙ্গার ছড়িয়ে পড়েছিল সারা পশ্চিমি দুনিয়ায়। তারই ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ক্যাম্পাস রেভোলিউশনের জন্ম হয়েছিল। নিউইয়র্ক শহরে শুরু হয়েছিল কবিতা আন্দোলন। বাংলায় যে হাংরি আন্দোলনের উৎস ঠিক কী ছিল তা আজও আমার কাছে পরিষ্কার নয়। এই গোষ্ঠীর কবিদের লেখা পড়ে আমার মনে হতো যৌন ক্ষুধাই যেন তাঁদের হাঙ্গারের উৎস। তাঁদের লেখায় দেখি অকারণ যৌনতার ছড়াছড়ি। তাছাড়া এই আন্দোলনের সবচেয়ে পরিচিত মুখ তো গর্ব করে বলতেই ভালোবাসেন যে তাঁকে অশ্লীলতার দায়ে কারাবন্দী করা হয়েছিল। আমার মনে হয়েছে অন্যরকম হতে চেষ্টা করার তাৎক্ষণিক উত্তেজনাই এই আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি হওয়াতে অল্পদিনের মধ্যেই অনেক সহযোগী সরে আসেন। শক্তি চট্টোপাধ্যায় শুরুতে এদের সঙ্গে থাকলেও, পরে সরে এসেছিলেন। আন্দোলনের হোতারা যদিও বলেন পুলিশের হাত থেকে নিস্তার পেতেই তিনি নাকি মুচলেকা দিয়ে সরে এসেছিলেন। কবির মুখে অবশ্য আমি শুনেছি আন্দোলনে বিশ্বাস হারানোই ছিল তাঁর সরে আসার মূল কারণ। তখন, আমার তরুণ বয়সে বাংলা কবিতার জগতটা বোঝার জন্য এই সব তথাকথিত নিয়মভাঙা কবিতাও অনেক পড়েছি, আজ কিন্তু সেসব পড়ার আর কোনো বাসনা হয় না।
অসীম সাহা ( বাংলাদেশ ) এর ঈর্ষা
উগ্রতা যা কিছু পুরনো তাকেই ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে চায়। কোনো তত্ত্ব বা দর্শন যেমন তার নেই, তেমনি অপরিকল্পিত উন্মার্গগামিতার দিকেই তার অভিসার। আধুনিকতার বিদ্রোহের মধ্যেও যেমন একটি সুনির্দিষ্ট শৃঙ্খলা লক্ষ করা যায়, উত্তরাধুনিকতা সেখানে বিশৃঙ্খলাকেই প্রাধান্য দেয়। এই তত্ত্ব সৃষ্টিতে বিশ্বাসী নয়, ভাঙনেই আস্থাবান। যে কোনো ধরনের নিয়ম তাদের প্রতিপক্ষ। ব্যক্তির চেয়ে সমষ্টিই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যদি এগুলোকে উত্তরাধুনিকতার সংজ্ঞা হিসেবে ধরে নিই, তাহলে ষাটের দশকে পশ্চিম বাংলার ‘হাংরি জেনারেশন’ বা ‘শ্রুতি আন্দোলন’ কিংবা বাংলাদেশের ‘স্যাড জেনারেশন’ তাদের মেনিফেস্টোয় যে বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে, সেই আধুনিকতার মধ্যে লক্ষ করা যাবে উত্তরাধুনিকতার চেয়েও ভয়াবহ আত্মঘাতী প্রবণতা ।
বীরেন মুখার্জি ( বাংলাদেশ )-এর ঈর্ষা
বিশ্বকবিতায় ফরাসি সিম্বলিজম, একজিস্টেন-শিয়ালিজম, ফিউচারিজম, ইম্প্রেশনিজম কিংবা স্যুরিয়ালিজমের মতো আন্দোলনগুলো ছিল সময় ও কালকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এক দৃঢ় অঙ্গীকার। এসব আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, কবিগোষ্ঠীর হাতে ‘নতুন প্রপঞ্চ বিনির্মাণের আগে পূর্ববর্তী সামাজিক, রাষ্ট্রিক, অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় রেখেই কবিদের এগোতে হয়। একটি নতুন সাহিত্য-আন্দোলন দানা বাঁধে তখনই, যখন তার সম্পূর্ণ উপাদান সমাজদেহের অভ্যন্তরে একটু একটু করে বেড়ে উঠতে থাকে।’ বাংলায়ও কয়েকটি কবিতা আন্দোলনের তথ্য মেলে। ষাটের দশকে পশ্চিম বাংলার ‘হাংরি জেনারেশন’ বা ‘শ্রুতি আন্দোলন’ কিংবা বাংলাদেশের ‘স্যাড জেনারেশন’ তাদের মেনিফেস্টোয় যে বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে, সেই আধুনিকতার মধ্যে উত্তরাধুনিকতার চেয়েও ভয়াবহ আত্মঘাতী প্রবণতা লক্ষ্যযোগ্য। ‘হাংরি আন্দোলন’ বাংলা কবিতায় বাঁক পরিবর্তনের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেও শেষপর্যন্ত পুরোপুরি সফলতা পায়নি। তবে এ আন্দোলনের পর আলোকপ্রাপ্তির যুক্তিবোধ, যৌন স্বাধীনতা, শৃঙ্খলমুক্তির ঔদার্য ইত্যাদি প্রপঞ্চ হিসেবে পরবর্তী কবিতায় স্থান করে নেয়। বলাই বাহুল্য, বিচ্ছিন্নতা, অনৈক্য, নিঃসঙ্গতা, সংস্কৃতির পচন, অবক্ষয় সমাজেরই একটি প্রপঞ্চ। সাম্প্রতিক কবিরা বিশৃঙ্খলাকে প্রাধান্য দিয়ে ভাঙনে আস্থা রেখেছেন, এমনটি লক্ষ করা যায়। তাই সাম্প্রতিক কবিতা হয়ে উঠছে সংশয় ও সংকটের প্রতিনিধি। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে কবিতা হয়ে উঠছে জনবিমুখ। কখনো ‘ভাষা হয়ে পড়ছে সংকেতের দ্বারা অন্তঃসত্ত্বা, ভাব পেয়ে যাচ্ছে ব্যঞ্জনা, কবিতা আসছে এগিয়ে এবং সে কবিতার সবটা শরীর সংকেতের এই সূক্ষ্ম অশরীরী উপস্থিতির দ্বারা এমনভাবে আক্রান্ত যে, কবিতার মূল কাব্যগুণ থেকে তাকে আলাদা করে দেখা সম্ভব নয়। আবার রহস্যময়তা ও জীবনজটিলতার প্রতীকী ব্যঞ্জনা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কবিতাকে নির্মেদ গতিময়তা এনে দিলেও সাম্প্রতিক কবিদের সংশয়বাদী মানসিকতা সমষ্টিগত সৌন্দর্যচেতনার ধারা কবিতায় তুলে আনতে সামগ্রিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে, এমনটি অনুমান করা যায়।
Wednesday, November 14, 2018
মেহদি হাসান মুন-এর ঈর্ষা
হাংরিয়ালিস্ট
mehedimoon
in Uncategorized
66 Words
Mehdi Hassan Moon of Dhaka
(এই গল্পে বর্ণিত সকল স্থান,কাল,ঘটনা,পাত্র কাল্পনিক।শুধুমাত্র হাংরি আন্দোলন সম্পর্কিত বিষয়বস্তুগুলো সত্য।গল্পের ঘটনা বিবর্তনের শিরোনামগুলোতে (ক,খ বা ১,২) এর পরিবর্তে হাংরি আন্দোলন সম্পর্কিত পত্রিকা ও ইশতেহারগুলোর নাম ব্যবহার করা হয়েছে।গল্পে অশ্লীলতা অত্যাধিক,তাই সুশীল পাঠকসমাজকে আগে থেকেই সতর্ক করে দেয়া হল।)
(ক্ষেপচুরিয়াস)
“পোঁদের ওপর বিষফোঁড়া”
-নেতাই…ও নেতাই,বিষফোঁড়া উঠেছে দেখেছিস?
-কোথায় কত্তা?
-ঐ যে দেখিসনে পোঁদের ওপর!
থলথলে রক্ত-পুঁজে ভরা তুলোর মতো নরম।
সেই ৪২ টি বছর ধরে উঠে রয়েছে, এখনো সেরে যাওয়ার নাম গন্ধ নেই।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে চিকন শলার সুঁই মাথা দিয়ে ঘেচাৎ করে গালিয়ে দেই।
দূষিত রক্তগুলো ঝরে যাক বীর্যের মতো পুঁজেরা ধুয়ে যাক।
কতদিন আর বয়ে নেই এদের বল? আহঃ আঃ আ আ… এতো ব্যাথা করে মাঝে মাঝে জানিস?
শালার সাহস হয় না… তা নাহলে সেই কবেই টিপে মাড়িয়ে দিতাম।
যতদিন যাচ্ছে ফুলে-ফেঁপে ঢুলছে মাদারচোত,
ধুরঃ… যা তো একটা সুঁই নিয়ে আয় গরম করে সেঁকে…
আজ ফোঁড়ার মধুচন্দ্রিমার এখানেই সমাপ্তি টানবো।
অনেক হয়েছে আর না
ঘেচাৎ করে গালিয়ে দেবো…
…………….
সদানন্দ চাটুজ্যে তার সামনে বসে থাকা হ্যাংলা পাতলা ছেলেটার দিকে আবার তাকালেন।তার দিকে ছেলেটার কোনো মনোযোগ নেই।সে মনের আনন্দে তার নাক খুঁটছে।নাক থেকে ময়লা এনে হাতে নিয়ে দেখছে তারপর আশপাশে তাকিয়ে টুক করে মুখে পুরে দিচ্ছে। তিনি খুক খুক করে কেশে উঠলেন।
-তোমার নাম যেন কি বললে?
-জী বলিনি। বলবো?
-হু।
-সমীরণ…সমীরণ দাস।
-এটা কি লিখেছো?
-কবিতা লেখার চেষ্টা করেছি।
-এটাকে তোমার কবিতা মনে হয়? এধরনের অশ্লীল,আজগুবি কবিতা আমি আমার পত্রিকায় ছাপাবো এটা তুমি কিভাবে ভাবলে?
-ভাবি নি তো। আমি জানি আপনি ছাপাবেন।
-হাহাহা…তাই নাকি? তা কিভাবে ছাপাবো আর কেনই বা ছাপাবো?
-তা জানিনা। কিন্তু আপনি ছাপাবেন।
-তোমার কথাবার্তায় কিন্তু আমি বেশ মজা পাচ্ছি ছোকরা। আমার মনে হয় তোমার মাথায় সমস্যা আছে। যাই হোক আমি তোমার কবিতা ছাপাবো না। এইসব ছাইপাশকে আর যাই হোক কবিতা বলেনা বুঝলে। এখন যেতে পারো।একদিনে অনেক বিনোদন দিয়ে ফেলেছো,আর চাই না।
-ঠিক আছে। আমার কবিতাটা দিন।
-কবিতা,না? এই নাও…
সদানন্দ চাটুজ্যে কবিতা লেখা কাগজটি দিয়ে নাকের স্যাঁতস্যাঁতে সর্দি মুছে হাসতে হাসতে তা পাশে রাখা ডাস্টবিনে ফেলে দিলেন এবং প্রথমবারের মতো সমীরণ ছেলেটির চোখে একরাশ বেদনা দেখতে পেলেন।
তখনই সমীরণ বিদ্যুৎগতিতে ডাস্টবিন থেকে কাগজখানা তুলে নিয়ে সদানন্দ চাটুজ্যের মুখ চেপে ধরলো। ধরে রইলো। ধরেই রইলো…
সমীরণ রুম থেকে বের হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে দেখলো সদানন্দ চাটুজ্যের প্রাণহীন চোখদুটি তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।মুখের হাসিটি তখনো অমলিন। (আবার এসেছি ফিরে)
শ্রদ্ধেয় মলয় রায়চৌধুরী,
নমস্কার।কেমন আছেন? আশা করি ভালো। আমাকে আপনি চিনবেন না কারণ আপনার সাথে আমার পরিচয় নাই। দেখা হবার সম্ভাবনাও অত্যন্ত ক্ষীণ। আপনি জানলে হয়তো খুশী হবেন যে আমি আপনার হাংরি জেনারেশন মতবাদের একনিষ্ঠ ভক্ত। আমি ঢাকায় তথা বাংলাদেশে এ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে ইচ্ছুক। কেননা আমাদের এপার বাংলায় কবিতা এক সরলরৈখিক পথে চলতে শুরু করেছে। রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দের দেখানো বাংলা যে কবেই বিলুপ্ত হয়েছে তা এখনকার তরুন কবিরা ভুলতে বসেছে। তারা এখনো বৃষ্টি,প্রকৃতি,প্রিয়তমা এদের নিয়ে কবিতা লিখতে ব্যস্ত। আর ছাপাখানায় এইসব কবিতাই অহরহ ছাপা হচ্ছে। আমার মতো যারা আধুনিক কবিতায় বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ করতে চাইছে তাদেরও নানাভাবে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত একান্ত কাম্য। আমি নিজেকে এখন একজন হাংরিয়ালিস্ট হিসেবে পরিচয় দিতে চাই যদিও আমাদের এপার বাংলায় আপনার হাংরি জেনারশন মতবাদ সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানে। তাই এটাই সবচেয়ে ভালো সময় এখানে এ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার। ১৯৬৫ তে যে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল সেটাকে কি আবার পুনর্জীবিত করে তোলা যায়না?আপনার ঠিকানা আমার কাছে নাই তাই এই চিঠি আপাতত আপনাকে দিতে পারছি না। তবে খুব শীঘ্রই আপনার ঠিকানা যোগাড় করে আমি আমার চিঠিখানা আপনার কাছে পৌছে দেবো। কারণ আপনার মতামত জানা আমার জন্য খুবই জরুরি।
ইতি,
হাংরিয়ালিস্ট
(কৌরব)
শুওরের বাচ্চার রুম চেক কর।প্রতিটা কোণা কোণা চেক কর।আফজালুর রহমান কপালের ঘাম মুছে পানের পিক ফেললেন ঘরের ভেতরেই।
“পাগল বানাইয়া ফেলসে আমারে।শালার জীবনে এতো ক্রিমিনাল দেখলাম কিন্তু এর মতন শুওরের বাচ্চা ক্রিমিনাল আর একটাও দেখিনাই”,কথাটা বেশ জোরেই বললেন তেজগাঁও থানার এসপি আফজালুর রহমান।
এক অদ্ভুত ধরনের সিরিয়াল কিলিং হচ্ছে বেশ কয়েক মাস ধরে এ ঢাকা শহরে।যাদের হত্যা করা হচ্ছে তারা সবাই কোনো না কোনো প্রকাশনা সংস্থার সাথে জড়িত।এছাড়া আর তেমন কোনো সূত্রও পাওয়া যায়নি।এমন অবস্থায় গত পরশু থানায় খবর আসে যে সদানন্দ প্রকাশনীর মালিক ও সম্পাদক সদানন্দ চাটুজ্যেকে কে নাকি শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে।লাশের পাশে একটা কবিতা লেখা কাগজ পাওয়া গেছে।কবিতার নাম “পোঁদের ওপর বিষফোঁড়া”।সেই কবিতার জের ধরেই আজ সমীরণ দাস নামক একজনের ঘরে তল্লাশি চালাতে এসেছে পুলিশ।কিন্তু এসে দেখে যে যাকে খোঁজা হচ্ছে সেই লোকই ঘরে নেই।
“স্যার ভেতরে তেমন কিছুই নেই,শুধু একটা ডাইরি পাওয়া গেছে।বাসা ছেঁড়ে মনে হয় চলে গেছে শালা।”,হাবিলদার রসূল খা এসে বললেন আফজালুর রহমানকে। আফজালুর রহমান মুখ শক্ত করে ডাইরিটা হাতে নিলেন এরপর এভিডেন্স ব্যাগে তা পুরে দিলেন।তারপর এই বাসায় নজর রাখতে বলে নীচে নেমে জীপে উঠলেন।
জীপে বসে ট্রান্সপারেন্ট এভিডেন্স ব্যাগটার দিকে তাকালেন তিনি।ডাইরিটা দেখতে বেশ পুরোনো মনে হচ্ছে।চামড়া ছিলে ঝুলে পড়েছে কয়েকজায়গায়,রং চটে গেছে অনেকখানি।ফিঙ্গারপ্রিন্ট টেস্ট করিয়ে কিছু না পাওয়া গেলে তো বিপদ হয়ে যাবে,একমনে ভাবছেন আফজালুর রহমান।ভেতরেই বা কি লেখা থাকতে পারে?এসব ভাবতে ভাবতেই তিনি হাতে গ্লোভস পড়ে ডাইরিটা বের করে ফেললেন ব্যাগ থেকে।হাতে নিয়ে ডাইরিটা খুলতেই একটা বোটকা গন্ধ নাকে এসে লাগলো তার।ডাইরিতে যে ক্যালেন্ডার দেয়া আছে তার দিকে তাকালেন তিনি।সাল লেখা ১৯৬৪-৬৫।আফজালুর রহমান অবাক হয়ে গেলেন এতো আগের ডাইরি এখনো অক্ষত অবস্থায় দেখে।প্রথম পৃষ্ঠা থেকেই খুব অগোছালো লেখা শুরু।আফজালুর রহমান পড়তে শুরু করলেন-
২রা নভেম্বর,১৯৬৪
“আমি,দেবী আর সুবিমল তো বিশ্বাসই করতে পারছিলুম না যে মলয়কে নিয়ে আমেরিকার টাইম পত্রিকা পুরো একখানা দশাসই আকারের লিখা ছাপিয়ে দিয়েছে।আমি চা টা করে আনলুম সবার জন্যে এই সাত-সকালে আর এসেই দেখি দেবী রায় হাসি হাসি মুখ করে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।ওর হাসি দেখলে কি কেউ বুঝবে যে ক’দিন আগেও সে হাংরি মুকদ্দমা লড়ে এসেছে।আমি জিজ্ঞেস করলুম যে-কি রে বাপু?এতো হাসির কি হলো হঠাৎ?তখনই সে এই ঘটনাখানি বলল আমায়।আনন্দবাজার,যুগান্তরও ক’দিন আগে আমাদের এই আন্দোলন নিয়ে লিখা ছাপালো।আর এখন তা ঐ বিদেশ মল্লুকেও পৌঁছে গেল?যাক এখন ভাবতেই শান্তি লাগছে যে আমাদের এতদিনের কষ্ট কিছুটা হলেও তো সফল হলো। দেবী হাসি হাসি মুখ করে বলল-শক্তি এখন বুঝবে ঠ্যালা?ছেঁড়ে যে চলে গেলো আমাদের,এখন আবার খবরখানা পড়ে পড়িমরি করে দৌড় না দেয় হে!
সুবিমল মাথা নাড়িয়ে বলল-আরে না…ও আর এসেছে!শক্তি চট্টোপাধ্যায় এখন বুঝতে শিখে গেছে যে কোথায় থাকলে লাভ আর কোথায় থাকলে ক্ষতি।ওর নতুন কবিতাখানা পড়েছিলুম কাল।হাসতে হাসতে বিষম খেলুম বুঝলে?কলিকাতায় যে এতো সৌন্দর্য বিরাজমান তা সে পাটনা বসে বসে লিখে ফেললো কি করে তাই বুঝতে পারলুম না। আমার ওদের এসব কথা ভালো লাগছিলো না তাই আমি উঠে এলুম সেখান থেকে।ভাবতে লাগলুম আমাদের এই হাংরি আন্দোলনের শেষ কোথায়?আমরা কোনো ভুল করছি না তো?”
আফজালুর রহমান এতটুকু পড়ে থামলেন।থানায় এসে পড়েছেন তাই বাকিটা এখন আর পড়া সম্ভব না।আজ রাতে বাসায় যেয়ে বাকিটা পড়তে হবে,ভাবলেন তিনি।তার কেমন যেন ঘোর লেগে যাচ্ছে পুরো ব্যাপারটায়।কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।কিছুই না…
(পোপের সমাধি)
আফজালুর রহমান হাতে বেশ কিছু বই নিয়ে বসে আছেন।আজ সারাদিন বিভিন্ন লাইব্রেরী খুঁজে,নানান মানুষের কাছে থেকে আনিয়ে বইগুলো সংগ্রহ করেছেন।আজ থানায়ও যান নি।সামনে রাখা নোটসগুলোর দিকে চোখ বুলালেন।হাংরি জেনারেশন বা হাংরি আন্দোলন নিয়ে যতো বইয়ের খোঁজ পেয়েছেন আনিয়ে নিয়েছেন তিনি।সেখান থেকে বেশ কিছু নোটস করেছেন যা পরে হয়তো কাজে লাগতে পারে।ঐ ডাইরিটা একটু পরে আসার কথা ফরেনসিক ল্যাব থেকে।ল্যাবে দেয়ার আগে আর পড়েনও নি তিনি।আফজালুর রহমান এটা খুব ভালভাবেই বুঝতে পেরেছেন যে ঐ ডাইরি,সিরিয়াল কিলিং আর হাংরি আন্দোলনের মধ্যে কোনো না কোনো যোগসূত্র অবশ্যই আছে।হাতে রাখা নোটসগুলো আবার পড়তে শুরু করলেন তিনি-
“বাংলা সাহিত্যে স্হিতাবস্হা ভাঙার আওয়াজ তুলে, ইশতেহার প্রকাশের মাধ্যমে, শিল্প ও সাহিত্যের যে একমাত্র আন্দোলন হয়েছে, তার নাম হাংরি আন্দোলন, যাকে অনেকে বলেন হাংরিয়ালিস্ট, ক্ষুধিত, ক্ষুৎকাতর, ক্ষুধার্ত আন্দোলন । আর্তি বা কাতরতা শব্দগুলো মতাদশর্টিকে সঠিক তুলে ধরতে পারবে না বলে, আন্দোলনকারীরা শেষাবধি হাংরি শব্দটি গ্রহণ করেন । হাংরি আন্দোলন, এই শব্দবন্ধটি বাংলাভাষায় ঠিক সেভাবে প্রবেশ করেছে যে ভাবে মুসলিম লিগ, কম্ম্যুনিস্ট পার্টি বা কংগ্রেস দল ইত্যাদি সংকরায়িত শব্দবন্ধগুলো । উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে ডিসকোর্সের সংকরায়ণকে স্বীকৃতি দেয়া তাঁদের কর্মকাণ্ডের অংশ ছিল । ১৯৬১ সালের নভেম্বরে পাটনা শহর থেকে একটি ইশতাহার প্রকাশের মাধ্যমে হাংরি আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিল হারাধন ধাড়া ওরফে দেবী রায়।কবিতা সম্পর্কিত ইশতাহারটি ছিল ইংরেজিতে, কেন না পাটনায় বাংলা প্রেস পাননি । আন্দোলনের প্রভাবটি ব্যাপক ও গভীর হলেও, ১৯৬৫ সালে প্রকৃত অর্থে হাংরি আন্দোলন ফুরিয়ে যায় । নকশাল আন্দোলনের পর উত্তরবঙ্গ এবং ত্রিপুরারতরুণ কবিরা আন্দোলনটিকে আবার জীবনদান করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তাত্ত্বিক ভিত্তিটি জানা না থাকায় তাঁরা আন্দোলনটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি ।
হাংরি আন্দোলনকারীরা হাংরি শব্দটি আহরণ করেছিলেন ইংরেজি ভাষার কবি জিওফ্রে চসারের ইন দি সাওয়ার হাংরি টাইম বাক্যটি থেকে , অর্থাৎ দেশভাগোত্তর বাঙালির কালখণ্ডটিকে তাঁরা হাংরিরূপে চিহ্ণিত করতে চাইলেন । তাত্তিক ভিত্তি সংগ্রহ করা হয়েছিল সমাজতাত্ত্বিক অসওয়াল্ড স্পেংলারের দি ডিক্লাইন অব দি ওয়েস্ট গ্রন্হটির দর্শন থেকে । স্পেংলার বলেছিলেন, একটি সংস্কৃতি কেবল সরলরেখা বরাবর যায় না; তা একযোগে বিভিন্ন দিকে প্রসারিত হয় । তা হল জৈবপ্রক্রিয়া, এবং সেকারণে সমাজটির নানা অংশের কার কোনদিকে বাঁকবদল ঘটবে তা আগাম বলা যায় না । যখন কেবল নিজের সৃজনক্ষমতার ওপর নির্ভর করে, তখন সংস্কৃতিটি বিকশিত ও সমৃদ্ধ হয় । তার সৃজনক্ষমতা ফুরিয়ে গেলে, তা বাইরে থেকে যা পায় ত-ই আত্মসাৎ করতে থাকে, খেতে থাকে, তার ক্ষুধা তখন তৃপ্তিহীন । হাংরি আন্দোলনকারীদের মনে হয়েছিল দেশভাগের ফলে ও পরে পশ্চিমবঙ্গ এই ভয়ংকর অবসানের মুখে পড়েছে, এবং উনিশ শতকের মণীষীদের পর্যায়ের বাঙালির আবির্ভাব আর সম্ভব নয় । সেকারণে হাংরি আন্দোলনকে তঁরা বললেন কাউন্টার কালচারাল আন্দোলন, এবং নিজেদের সাহিত্যকৃতিকে কাউন্টার ডিসকোর্স।”
আফজালুর রহমানের কবিতা বা সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞান একদমই শূন্য বলতে গেলে।তাই তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য।আর এই আন্দোলনের সাথে এখনকার এই সিরিয়াল কিলিং এর কি ই বা সম্পর্ক থাকতে পারে।ঐ ডাইরিটিই বা গেল কিভাবে ঐ ক্রিমিনালের বাসায়?ভেবেই পাচ্ছেন না আফজাল।তার মাথা বনবন করে ঘুরছে।বনবন করে…ভনভন করে।।
(মানুষের বাচ্চা.ক)
সমীরণ প্রায় আধঘণ্টা ধরে ল্যাট্রিনে বসে আছে।২ দিন ধরে পেট খারাপ তার।যেই মেসে উঠেছে সেখানকার বুয়ার রান্না এতটাই বাজে যে সমীরণের পেট একদমই ফেঁসে গেছে।কিছু খেলেই পেট নেমে যাচ্ছে তার আর তার ফলশ্রুতিতে পোকামাকড়ের ঘরবসতি এই ল্যাট্রিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকে কাঁটিয়ে দিতে হচ্ছে। সমীরণ তার হলদেটে চোখ দিয়ে পাশে গ্লাসে রাখা ইসপগুলের ভুষির দিকে তাকালো।২-৩ টা পিঁপড়া তাতে ডুবসাঁতার দিচ্ছে আর আরও কয়েকটা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।সমীরণ বাংলাদেশের পুলিশদের অকর্মণ্যতার কথা শুনেছিল এতদিন কিন্তু এখন নিজেই সেটা অনুভব করছে।এদের প্রমাণ তুলে খাইয়ে দিলেও এরা অপরাধী ধরতে পারে না।সে ৭ টা খুন করলো পরপর,আগের বাসায় তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট সহ ডাইরি রেখে এলো,শেষ খুনের ভিক্টিমের পাশে তার নিজের নামসহ কবিতা লিখে রেখে আসলো তাও পুলিশ তাকে ধরতে পারছে না।এতো বড় একটা হাই প্রোফাইল সিরিয়াল কিলিং কেস কিন্তু তাও তাকে কেউ ধরতেই আসছে না।
“শালার জেলে থাকলেও শান্তি পেতাম।অন্তত খাবারটা তো ঠিকমতো দিত”,বেশ কয়েকটা পাদ ছেঁড়ে ফোঁস ফোঁস করে বলল সমীরণ।
ইসপগুলের ভূষিটা কমোডে ফেলে লুঙ্গি কাচা দিয়ে উঠে পড়লো সে।যেকোনো সময় পুলিশ হয়তো এসে পড়তেও পারে।তাই মলয় রায়কে শেষ একটা চিঠি লিখে যেতেই হবে তার।ঠিকানাটা অবশেষে পেয়েছে সে অনেক কষ্টের পর।সবগুলো চিঠি একসাথেই পাঠিয়ে দেবে। সমীরণ চেয়ারের ওপর বুয়ার রেখে যাওয়া তেল চিটচিটে বালিশটা রেখে তার ওপর বসে পড়লো,যাতে পাছার ওপর চাপও কম পড়ে আর কিছু হয়ে গেলে যেন বুয়ার বালিশটাই নষ্ট হয়।
শ্রদ্ধেয় মলয় রায়চৌধুরী,
নমস্কার।আপনাকে এ পর্যন্ত আমি ২২ টি চিঠি লিখেছি।আর এটিই হবে আপনাকে লেখা আমার শেষ চিঠি।আগের চিঠিগুলোতেই আমি আপনাকে সবকিছু জানিয়ে দিয়েছি এবং আমার পরিস্থিতি বোঝানোরও চেষ্টা করেছি।কিভাবে আমি আপনার বড় দাদা সমীর রায়চৌধুরীর ফেলে দেয়া ডাইরিটি আমার বাবার কাছ থেকে পাই,কিভাবে আমি একজন হাংরিয়ালিস্ট হই,কিভাবে আমি হাই প্রোফাইল সিরিয়াল কিলিং এর মাধ্যমে হাংরি জেনারেশনকে মিডিয়াতে প্রচার করতে চাই তা আপনার সবটাই জানা।আপনারা যদি অহিংস আন্দোলন ছেঁড়ে সহিংস পথ বেছে নিতেন সেই ষাটের দশকে তাহলে আমাকে আমার জীবনটা এভাবে উৎসর্গ করতে হতো না।আমি অনেক ভেবে দেখেছি যতদিন পর্যন্ত আমি এ দেশের প্রতিটি তরুন কবিকে হাংরি আন্দোলনের মতবাদ সম্পর্কে জানাতে পারবো না ততদিন পর্যন্ত কবিতার ধারা বদলাবে না।প্রতিটি কবিকে নষ্ট হতে হবে,পথভ্রষ্ট হতে হবে তা নাহলে কবিতা লিখে লাভ নেই।কারণ পৃথিবীটাই তো এখন নষ্ট হয়ে গেছে।এখন আমি পুলিশের হাতে ধরা পড়লেই আমি মিডিয়াতে হাংরি জেনারেশনের কথা তুলে ধরবো।আর মিডিয়ার মাধ্যমেই সব কবি-সাহিত্যিকের কাছেও আমার কথা তুলে ধরতে পারবো।আমার মৃত্যুদণ্ড হয়ে যাবে নিশ্চিত তাই আপনাকে আমি দায়িত্ব দিয়ে গেলাম এপার বাংলার পরবর্তী সাংস্কৃতিক অচলাবস্থা সম্পর্কে তীব্র দৃষ্টি রাখার জন্য এবং হাংরি জেনারেশনকে এক নতুন মাত্রা দেয়ার জন্য।আশা করি আপনি আমার অনুরোধ রাখবেন। আমি আপনার বোম্বের ঠিকানাটা পেয়েছি অনেক খোঁজার পর।তাই সবগুলো চিঠি আপনাকে একসাথে পাঠিয়ে দিচ্ছি।আমি একজন হাংরিয়ালিস্ট হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছি মলয় রায়,এখন আপনার পালা।
ইতি
হাংরিয়ালিস্ট
(মানুষের বাচ্চা.খ)
মলয় রায় ব্যালকনিতে গা এলিয়ে বসে আছেন।পত্রিকা পড়া আপাতত শেষ তাই তিনি আঙুল দিয়ে আয়েশ করে নাক খুঁটছেন।তারপর ময়লা বের করে আশেপাশে তাকিয়ে টুপ করে মুখে পুরে দিচ্ছেন।ইদানিং ময়লার সাথে পাকা চুলও চলে আসে তাই তিনি প্রায়শই বিরক্ত হন।
“কত্তা একটা চিঠি এসেছে যে।”,হঠাৎ করেই কালিপদের কণ্ঠস্বরে কেঁপে উঠলেন মলয় রায়। “ঐ শালা বাঞ্চোত,শব্দ করে আসতে পারিস না।যা এখন এখান থেকে।”নাক-মুখ খিঁচিয়ে বলে উঠলেন তিনি।
“আজ্ঞে,চিঠি টা?”
“হ্যাঁ,দিয়ে যা।”
মলয় রায় চিঠি দেখে যারপরনাই বিরক্ত হলেন তার সাথে বিস্মিতও।যেই পাগলটার চিঠিগুলো তাকে ভয় পাইয়ে তটস্থ করে রেখেছিল এতদিন সেই পাগলটার তো ফাঁসি ই হয়ে গেলো কয়দিন আগে,টিভিতে দেখেছিলেনও তিনি সেই খবর।এখন আবার চিঠি পাঠালো কে?তিনি কাঁপা কাঁপা হাতে খুলতে লাগলেন চিঠির খাম…
শ্রদ্ধেয় মলয় রায়চৌধুরী,
নমস্কার।কেমন আছেন?আছেন?আশা করি ভালো।আমাকে আপনি চিনবেন না কারণ আপনার সাথে আমার পরিচয় নাই।দেখা হবার সম্ভাবনাও অত্যন্ত ক্ষীণ।আপনি জানলে হয়তো খুশী হবেন যে আমি আপনার হাংরি জেনারেশন মতবাদের একনিষ্ঠ ভক্ত।আমি ঢাকায় তথা বাংলাদেশে এ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে ইচ্ছুক।কেননা আমাদের এপার বাংলায় কবিতা এক সরলরৈখিক পথে চলতে শুরু করেছে।রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দের দেখানো বাংলা যে কবেই বিলুপ্ত হয়েছে তা এখনকার তরুন কবিরা ভুলতে বসেছে।তারা এখনো বৃষ্টি,প্রকৃতি,প্রিয়তমা এদের নিয়ে কবিতা লিখতে ব্যস্ত।আর ছাপাখানায় এইসব কবিতাই অহরহ ছাপা হচ্ছে।আমার মতো যারা আধুনিক কবিতায় বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ করতে চাইছে তাদেরও নানাভাবে বাঁধা দেয়া হচ্ছে।এ ব্যাপারে আপনার মতামত একান্ত কাম্য।আমি নিজেকে এখন একজন হাংরিয়ালিস্ট হিসেবে পরিচয় দিতে চাই যদিও আমাদের এপার বাংলায় আপনার হাংরি জেনারশন মতবাদ সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানে।তাই এটাই সবচেয়ে ভালো সময় এখানে এ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার।১৯৬৫ তে যে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল সেটাকে কি আবার পুনর্জীবিত করে তোলা যায়না?আপনার ঠিকানা আমার কাছে নাই তাই এই চিঠি আপাতত আপনাকে দিতে পারছি না।তবে খুব শীঘ্রই আপনার ঠিকানা যোগাড় করে আমি আমার চিঠিখানা আপনার কাছে পৌছে দেবো।কারণ আপনার মতামত জানা আমার জন্য খুবই জরুরি।
ইতি,
হাংরিয়ালিস্ট
কালিপদ দূর থেকেই দেখলো তার কর্তা চিঠিখানা পড়েই অজ্ঞান হয়ে চেয়ার থেকে পড়ে গেছেন।কালিপদের উঠতে ইচ্ছে করছে না।পড়ে থাকুক বুড়ো আরও কিছুক্ষন।পরে যেয়ে সবাইকে বলা যাবে ক্ষণ…
(মানুষের বাচ্চা.গ)
হাতে লেগে থাকা রক্ত কোনমতেই ওঠানো যাচ্ছে না।এমনভাবে শুকিয়ে লেগে গেছে যে আফজালুর রহমান কসমস সাবান একটা ডলে শেষ করেও পুরোপুরি ওঠাতে পারছেন না।নখের আগায় তো এখনো লেগে আছে। সমীরণের ফাঁসি হয়েছে দুই মাস হলো,আফজালুর রহমানই সেই কেসের ইনচার্জ ছিলেন,প্রোমোশনও হয়েছে তার কয়দিন হয়।
“ধুস…সালা”,আফজাল হাল ছেঁড়ে কল বন্ধই করে দিলেন।খাতা-কলম নিয়ে বসে পড়লেন তিনি।সেই সকাল থেকেই একটা কবিতা মাথায় ঘুরছে তার কিন্তু এক মাগী প্রকাশককে খুন করতে গিয়েই সব ভজঘট হয়ে গেছে।“আমার কবিতা ছাপবেনা!সাহস কতবড়…কিন্তু এখন নতুন কবিতাই তো মাথায় প্যাচ খেয়ে গেছে।সমীরণ যে কিভাবে পারতো?”,নিজেকেই যেন জিজ্ঞেস করলেন আফজাল।বুঝতে পারলেন হাংরিয়ালিস্ট হতে এখনো আরও সাধনা করতে হবে তাকে…আরও অনেক সাধনা।
………………………………………সমাপ্ত……………………………………
[১৯৬৪ সালে মলয় রায়চৌধুরী তার “প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার” কবিতাটির জন্য অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হয়ে গ্রেফতার হন।পরবর্তীতে তিনি মুক্তি পেলেও “হাংরি আন্দোলন” এর কার্যত সেখানেই সমাপ্তি ঘটে।তিনি বর্তমানে মুম্বাই এ বসবাস করেন তার পরিবারের সাথে।“হাংরিয়ালিস্ট” গল্পে তার ঘটনাটি পুরোটাই কাল্পনিক।]
-মেহেদী হাসান মুন
(রচনাকাল- ১৩ মে,২০১৩)
(এই গল্পে বর্ণিত সকল স্থান,কাল,ঘটনা,পাত্র কাল্পনিক।শুধুমাত্র হাংরি আন্দোলন সম্পর্কিত বিষয়বস্তুগুলো সত্য।গল্পের ঘটনা বিবর্তনের শিরোনামগুলোতে (ক,খ বা ১,২) এর পরিবর্তে হাংরি আন্দোলন সম্পর্কিত পত্রিকা ও ইশতেহারগুলোর নাম ব্যবহার করা হয়েছে।গল্পে অশ্লীলতা অত্যাধিক,তাই সুশীল পাঠকসমাজকে আগে থেকেই সতর্ক করে দেয়া হল।)
(ক্ষেপচুরিয়াস)
“পোঁদের ওপর বিষফোঁড়া”
-নেতাই…ও নেতাই,বিষফোঁড়া উঠেছে দেখেছিস?
-কোথায় কত্তা?
-ঐ যে দেখিসনে পোঁদের ওপর!
থলথলে রক্ত-পুঁজে ভরা তুলোর মতো নরম।
সেই ৪২ টি বছর ধরে উঠে রয়েছে, এখনো সেরে যাওয়ার নাম গন্ধ নেই।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে চিকন শলার সুঁই মাথা দিয়ে ঘেচাৎ করে গালিয়ে দেই।
দূষিত রক্তগুলো ঝরে যাক বীর্যের মতো পুঁজেরা ধুয়ে যাক।
কতদিন আর বয়ে নেই এদের বল? আহঃ আঃ আ আ… এতো ব্যাথা করে মাঝে মাঝে জানিস?
শালার সাহস হয় না… তা নাহলে সেই কবেই টিপে মাড়িয়ে দিতাম।
যতদিন যাচ্ছে ফুলে-ফেঁপে ঢুলছে মাদারচোত,
ধুরঃ… যা তো একটা সুঁই নিয়ে আয় গরম করে সেঁকে…
আজ ফোঁড়ার মধুচন্দ্রিমার এখানেই সমাপ্তি টানবো।
অনেক হয়েছে আর না
ঘেচাৎ করে গালিয়ে দেবো…
…………….
সদানন্দ চাটুজ্যে তার সামনে বসে থাকা হ্যাংলা পাতলা ছেলেটার দিকে আবার তাকালেন।তার দিকে ছেলেটার কোনো মনোযোগ নেই।সে মনের আনন্দে তার নাক খুঁটছে।নাক থেকে ময়লা এনে হাতে নিয়ে দেখছে তারপর আশপাশে তাকিয়ে টুক করে মুখে পুরে দিচ্ছে। তিনি খুক খুক করে কেশে উঠলেন।
-তোমার নাম যেন কি বললে?
-জী বলিনি। বলবো?
-হু।
-সমীরণ…সমীরণ দাস।
-এটা কি লিখেছো?
-কবিতা লেখার চেষ্টা করেছি।
-এটাকে তোমার কবিতা মনে হয়? এধরনের অশ্লীল,আজগুবি কবিতা আমি আমার পত্রিকায় ছাপাবো এটা তুমি কিভাবে ভাবলে?
-ভাবি নি তো। আমি জানি আপনি ছাপাবেন।
-হাহাহা…তাই নাকি? তা কিভাবে ছাপাবো আর কেনই বা ছাপাবো?
-তা জানিনা। কিন্তু আপনি ছাপাবেন।
-তোমার কথাবার্তায় কিন্তু আমি বেশ মজা পাচ্ছি ছোকরা। আমার মনে হয় তোমার মাথায় সমস্যা আছে। যাই হোক আমি তোমার কবিতা ছাপাবো না। এইসব ছাইপাশকে আর যাই হোক কবিতা বলেনা বুঝলে। এখন যেতে পারো।একদিনে অনেক বিনোদন দিয়ে ফেলেছো,আর চাই না।
-ঠিক আছে। আমার কবিতাটা দিন।
-কবিতা,না? এই নাও…
সদানন্দ চাটুজ্যে কবিতা লেখা কাগজটি দিয়ে নাকের স্যাঁতস্যাঁতে সর্দি মুছে হাসতে হাসতে তা পাশে রাখা ডাস্টবিনে ফেলে দিলেন এবং প্রথমবারের মতো সমীরণ ছেলেটির চোখে একরাশ বেদনা দেখতে পেলেন।
তখনই সমীরণ বিদ্যুৎগতিতে ডাস্টবিন থেকে কাগজখানা তুলে নিয়ে সদানন্দ চাটুজ্যের মুখ চেপে ধরলো। ধরে রইলো। ধরেই রইলো…
সমীরণ রুম থেকে বের হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে দেখলো সদানন্দ চাটুজ্যের প্রাণহীন চোখদুটি তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।মুখের হাসিটি তখনো অমলিন। (আবার এসেছি ফিরে)
শ্রদ্ধেয় মলয় রায়চৌধুরী,
নমস্কার।কেমন আছেন? আশা করি ভালো। আমাকে আপনি চিনবেন না কারণ আপনার সাথে আমার পরিচয় নাই। দেখা হবার সম্ভাবনাও অত্যন্ত ক্ষীণ। আপনি জানলে হয়তো খুশী হবেন যে আমি আপনার হাংরি জেনারেশন মতবাদের একনিষ্ঠ ভক্ত। আমি ঢাকায় তথা বাংলাদেশে এ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে ইচ্ছুক। কেননা আমাদের এপার বাংলায় কবিতা এক সরলরৈখিক পথে চলতে শুরু করেছে। রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দের দেখানো বাংলা যে কবেই বিলুপ্ত হয়েছে তা এখনকার তরুন কবিরা ভুলতে বসেছে। তারা এখনো বৃষ্টি,প্রকৃতি,প্রিয়তমা এদের নিয়ে কবিতা লিখতে ব্যস্ত। আর ছাপাখানায় এইসব কবিতাই অহরহ ছাপা হচ্ছে। আমার মতো যারা আধুনিক কবিতায় বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ করতে চাইছে তাদেরও নানাভাবে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত একান্ত কাম্য। আমি নিজেকে এখন একজন হাংরিয়ালিস্ট হিসেবে পরিচয় দিতে চাই যদিও আমাদের এপার বাংলায় আপনার হাংরি জেনারশন মতবাদ সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানে। তাই এটাই সবচেয়ে ভালো সময় এখানে এ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার। ১৯৬৫ তে যে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল সেটাকে কি আবার পুনর্জীবিত করে তোলা যায়না?আপনার ঠিকানা আমার কাছে নাই তাই এই চিঠি আপাতত আপনাকে দিতে পারছি না। তবে খুব শীঘ্রই আপনার ঠিকানা যোগাড় করে আমি আমার চিঠিখানা আপনার কাছে পৌছে দেবো। কারণ আপনার মতামত জানা আমার জন্য খুবই জরুরি।
ইতি,
হাংরিয়ালিস্ট
(কৌরব)
শুওরের বাচ্চার রুম চেক কর।প্রতিটা কোণা কোণা চেক কর।আফজালুর রহমান কপালের ঘাম মুছে পানের পিক ফেললেন ঘরের ভেতরেই।
“পাগল বানাইয়া ফেলসে আমারে।শালার জীবনে এতো ক্রিমিনাল দেখলাম কিন্তু এর মতন শুওরের বাচ্চা ক্রিমিনাল আর একটাও দেখিনাই”,কথাটা বেশ জোরেই বললেন তেজগাঁও থানার এসপি আফজালুর রহমান।
এক অদ্ভুত ধরনের সিরিয়াল কিলিং হচ্ছে বেশ কয়েক মাস ধরে এ ঢাকা শহরে।যাদের হত্যা করা হচ্ছে তারা সবাই কোনো না কোনো প্রকাশনা সংস্থার সাথে জড়িত।এছাড়া আর তেমন কোনো সূত্রও পাওয়া যায়নি।এমন অবস্থায় গত পরশু থানায় খবর আসে যে সদানন্দ প্রকাশনীর মালিক ও সম্পাদক সদানন্দ চাটুজ্যেকে কে নাকি শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে।লাশের পাশে একটা কবিতা লেখা কাগজ পাওয়া গেছে।কবিতার নাম “পোঁদের ওপর বিষফোঁড়া”।সেই কবিতার জের ধরেই আজ সমীরণ দাস নামক একজনের ঘরে তল্লাশি চালাতে এসেছে পুলিশ।কিন্তু এসে দেখে যে যাকে খোঁজা হচ্ছে সেই লোকই ঘরে নেই।
“স্যার ভেতরে তেমন কিছুই নেই,শুধু একটা ডাইরি পাওয়া গেছে।বাসা ছেঁড়ে মনে হয় চলে গেছে শালা।”,হাবিলদার রসূল খা এসে বললেন আফজালুর রহমানকে। আফজালুর রহমান মুখ শক্ত করে ডাইরিটা হাতে নিলেন এরপর এভিডেন্স ব্যাগে তা পুরে দিলেন।তারপর এই বাসায় নজর রাখতে বলে নীচে নেমে জীপে উঠলেন।
জীপে বসে ট্রান্সপারেন্ট এভিডেন্স ব্যাগটার দিকে তাকালেন তিনি।ডাইরিটা দেখতে বেশ পুরোনো মনে হচ্ছে।চামড়া ছিলে ঝুলে পড়েছে কয়েকজায়গায়,রং চটে গেছে অনেকখানি।ফিঙ্গারপ্রিন্ট টেস্ট করিয়ে কিছু না পাওয়া গেলে তো বিপদ হয়ে যাবে,একমনে ভাবছেন আফজালুর রহমান।ভেতরেই বা কি লেখা থাকতে পারে?এসব ভাবতে ভাবতেই তিনি হাতে গ্লোভস পড়ে ডাইরিটা বের করে ফেললেন ব্যাগ থেকে।হাতে নিয়ে ডাইরিটা খুলতেই একটা বোটকা গন্ধ নাকে এসে লাগলো তার।ডাইরিতে যে ক্যালেন্ডার দেয়া আছে তার দিকে তাকালেন তিনি।সাল লেখা ১৯৬৪-৬৫।আফজালুর রহমান অবাক হয়ে গেলেন এতো আগের ডাইরি এখনো অক্ষত অবস্থায় দেখে।প্রথম পৃষ্ঠা থেকেই খুব অগোছালো লেখা শুরু।আফজালুর রহমান পড়তে শুরু করলেন-
২রা নভেম্বর,১৯৬৪
“আমি,দেবী আর সুবিমল তো বিশ্বাসই করতে পারছিলুম না যে মলয়কে নিয়ে আমেরিকার টাইম পত্রিকা পুরো একখানা দশাসই আকারের লিখা ছাপিয়ে দিয়েছে।আমি চা টা করে আনলুম সবার জন্যে এই সাত-সকালে আর এসেই দেখি দেবী রায় হাসি হাসি মুখ করে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।ওর হাসি দেখলে কি কেউ বুঝবে যে ক’দিন আগেও সে হাংরি মুকদ্দমা লড়ে এসেছে।আমি জিজ্ঞেস করলুম যে-কি রে বাপু?এতো হাসির কি হলো হঠাৎ?তখনই সে এই ঘটনাখানি বলল আমায়।আনন্দবাজার,যুগান্তরও ক’দিন আগে আমাদের এই আন্দোলন নিয়ে লিখা ছাপালো।আর এখন তা ঐ বিদেশ মল্লুকেও পৌঁছে গেল?যাক এখন ভাবতেই শান্তি লাগছে যে আমাদের এতদিনের কষ্ট কিছুটা হলেও তো সফল হলো। দেবী হাসি হাসি মুখ করে বলল-শক্তি এখন বুঝবে ঠ্যালা?ছেঁড়ে যে চলে গেলো আমাদের,এখন আবার খবরখানা পড়ে পড়িমরি করে দৌড় না দেয় হে!
সুবিমল মাথা নাড়িয়ে বলল-আরে না…ও আর এসেছে!শক্তি চট্টোপাধ্যায় এখন বুঝতে শিখে গেছে যে কোথায় থাকলে লাভ আর কোথায় থাকলে ক্ষতি।ওর নতুন কবিতাখানা পড়েছিলুম কাল।হাসতে হাসতে বিষম খেলুম বুঝলে?কলিকাতায় যে এতো সৌন্দর্য বিরাজমান তা সে পাটনা বসে বসে লিখে ফেললো কি করে তাই বুঝতে পারলুম না। আমার ওদের এসব কথা ভালো লাগছিলো না তাই আমি উঠে এলুম সেখান থেকে।ভাবতে লাগলুম আমাদের এই হাংরি আন্দোলনের শেষ কোথায়?আমরা কোনো ভুল করছি না তো?”
আফজালুর রহমান এতটুকু পড়ে থামলেন।থানায় এসে পড়েছেন তাই বাকিটা এখন আর পড়া সম্ভব না।আজ রাতে বাসায় যেয়ে বাকিটা পড়তে হবে,ভাবলেন তিনি।তার কেমন যেন ঘোর লেগে যাচ্ছে পুরো ব্যাপারটায়।কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।কিছুই না…
(পোপের সমাধি)
আফজালুর রহমান হাতে বেশ কিছু বই নিয়ে বসে আছেন।আজ সারাদিন বিভিন্ন লাইব্রেরী খুঁজে,নানান মানুষের কাছে থেকে আনিয়ে বইগুলো সংগ্রহ করেছেন।আজ থানায়ও যান নি।সামনে রাখা নোটসগুলোর দিকে চোখ বুলালেন।হাংরি জেনারেশন বা হাংরি আন্দোলন নিয়ে যতো বইয়ের খোঁজ পেয়েছেন আনিয়ে নিয়েছেন তিনি।সেখান থেকে বেশ কিছু নোটস করেছেন যা পরে হয়তো কাজে লাগতে পারে।ঐ ডাইরিটা একটু পরে আসার কথা ফরেনসিক ল্যাব থেকে।ল্যাবে দেয়ার আগে আর পড়েনও নি তিনি।আফজালুর রহমান এটা খুব ভালভাবেই বুঝতে পেরেছেন যে ঐ ডাইরি,সিরিয়াল কিলিং আর হাংরি আন্দোলনের মধ্যে কোনো না কোনো যোগসূত্র অবশ্যই আছে।হাতে রাখা নোটসগুলো আবার পড়তে শুরু করলেন তিনি-
“বাংলা সাহিত্যে স্হিতাবস্হা ভাঙার আওয়াজ তুলে, ইশতেহার প্রকাশের মাধ্যমে, শিল্প ও সাহিত্যের যে একমাত্র আন্দোলন হয়েছে, তার নাম হাংরি আন্দোলন, যাকে অনেকে বলেন হাংরিয়ালিস্ট, ক্ষুধিত, ক্ষুৎকাতর, ক্ষুধার্ত আন্দোলন । আর্তি বা কাতরতা শব্দগুলো মতাদশর্টিকে সঠিক তুলে ধরতে পারবে না বলে, আন্দোলনকারীরা শেষাবধি হাংরি শব্দটি গ্রহণ করেন । হাংরি আন্দোলন, এই শব্দবন্ধটি বাংলাভাষায় ঠিক সেভাবে প্রবেশ করেছে যে ভাবে মুসলিম লিগ, কম্ম্যুনিস্ট পার্টি বা কংগ্রেস দল ইত্যাদি সংকরায়িত শব্দবন্ধগুলো । উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে ডিসকোর্সের সংকরায়ণকে স্বীকৃতি দেয়া তাঁদের কর্মকাণ্ডের অংশ ছিল । ১৯৬১ সালের নভেম্বরে পাটনা শহর থেকে একটি ইশতাহার প্রকাশের মাধ্যমে হাংরি আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিল হারাধন ধাড়া ওরফে দেবী রায়।কবিতা সম্পর্কিত ইশতাহারটি ছিল ইংরেজিতে, কেন না পাটনায় বাংলা প্রেস পাননি । আন্দোলনের প্রভাবটি ব্যাপক ও গভীর হলেও, ১৯৬৫ সালে প্রকৃত অর্থে হাংরি আন্দোলন ফুরিয়ে যায় । নকশাল আন্দোলনের পর উত্তরবঙ্গ এবং ত্রিপুরারতরুণ কবিরা আন্দোলনটিকে আবার জীবনদান করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তাত্ত্বিক ভিত্তিটি জানা না থাকায় তাঁরা আন্দোলনটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি ।
হাংরি আন্দোলনকারীরা হাংরি শব্দটি আহরণ করেছিলেন ইংরেজি ভাষার কবি জিওফ্রে চসারের ইন দি সাওয়ার হাংরি টাইম বাক্যটি থেকে , অর্থাৎ দেশভাগোত্তর বাঙালির কালখণ্ডটিকে তাঁরা হাংরিরূপে চিহ্ণিত করতে চাইলেন । তাত্তিক ভিত্তি সংগ্রহ করা হয়েছিল সমাজতাত্ত্বিক অসওয়াল্ড স্পেংলারের দি ডিক্লাইন অব দি ওয়েস্ট গ্রন্হটির দর্শন থেকে । স্পেংলার বলেছিলেন, একটি সংস্কৃতি কেবল সরলরেখা বরাবর যায় না; তা একযোগে বিভিন্ন দিকে প্রসারিত হয় । তা হল জৈবপ্রক্রিয়া, এবং সেকারণে সমাজটির নানা অংশের কার কোনদিকে বাঁকবদল ঘটবে তা আগাম বলা যায় না । যখন কেবল নিজের সৃজনক্ষমতার ওপর নির্ভর করে, তখন সংস্কৃতিটি বিকশিত ও সমৃদ্ধ হয় । তার সৃজনক্ষমতা ফুরিয়ে গেলে, তা বাইরে থেকে যা পায় ত-ই আত্মসাৎ করতে থাকে, খেতে থাকে, তার ক্ষুধা তখন তৃপ্তিহীন । হাংরি আন্দোলনকারীদের মনে হয়েছিল দেশভাগের ফলে ও পরে পশ্চিমবঙ্গ এই ভয়ংকর অবসানের মুখে পড়েছে, এবং উনিশ শতকের মণীষীদের পর্যায়ের বাঙালির আবির্ভাব আর সম্ভব নয় । সেকারণে হাংরি আন্দোলনকে তঁরা বললেন কাউন্টার কালচারাল আন্দোলন, এবং নিজেদের সাহিত্যকৃতিকে কাউন্টার ডিসকোর্স।”
আফজালুর রহমানের কবিতা বা সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞান একদমই শূন্য বলতে গেলে।তাই তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য।আর এই আন্দোলনের সাথে এখনকার এই সিরিয়াল কিলিং এর কি ই বা সম্পর্ক থাকতে পারে।ঐ ডাইরিটিই বা গেল কিভাবে ঐ ক্রিমিনালের বাসায়?ভেবেই পাচ্ছেন না আফজাল।তার মাথা বনবন করে ঘুরছে।বনবন করে…ভনভন করে।।
(মানুষের বাচ্চা.ক)
সমীরণ প্রায় আধঘণ্টা ধরে ল্যাট্রিনে বসে আছে।২ দিন ধরে পেট খারাপ তার।যেই মেসে উঠেছে সেখানকার বুয়ার রান্না এতটাই বাজে যে সমীরণের পেট একদমই ফেঁসে গেছে।কিছু খেলেই পেট নেমে যাচ্ছে তার আর তার ফলশ্রুতিতে পোকামাকড়ের ঘরবসতি এই ল্যাট্রিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকে কাঁটিয়ে দিতে হচ্ছে। সমীরণ তার হলদেটে চোখ দিয়ে পাশে গ্লাসে রাখা ইসপগুলের ভুষির দিকে তাকালো।২-৩ টা পিঁপড়া তাতে ডুবসাঁতার দিচ্ছে আর আরও কয়েকটা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।সমীরণ বাংলাদেশের পুলিশদের অকর্মণ্যতার কথা শুনেছিল এতদিন কিন্তু এখন নিজেই সেটা অনুভব করছে।এদের প্রমাণ তুলে খাইয়ে দিলেও এরা অপরাধী ধরতে পারে না।সে ৭ টা খুন করলো পরপর,আগের বাসায় তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট সহ ডাইরি রেখে এলো,শেষ খুনের ভিক্টিমের পাশে তার নিজের নামসহ কবিতা লিখে রেখে আসলো তাও পুলিশ তাকে ধরতে পারছে না।এতো বড় একটা হাই প্রোফাইল সিরিয়াল কিলিং কেস কিন্তু তাও তাকে কেউ ধরতেই আসছে না।
“শালার জেলে থাকলেও শান্তি পেতাম।অন্তত খাবারটা তো ঠিকমতো দিত”,বেশ কয়েকটা পাদ ছেঁড়ে ফোঁস ফোঁস করে বলল সমীরণ।
ইসপগুলের ভূষিটা কমোডে ফেলে লুঙ্গি কাচা দিয়ে উঠে পড়লো সে।যেকোনো সময় পুলিশ হয়তো এসে পড়তেও পারে।তাই মলয় রায়কে শেষ একটা চিঠি লিখে যেতেই হবে তার।ঠিকানাটা অবশেষে পেয়েছে সে অনেক কষ্টের পর।সবগুলো চিঠি একসাথেই পাঠিয়ে দেবে। সমীরণ চেয়ারের ওপর বুয়ার রেখে যাওয়া তেল চিটচিটে বালিশটা রেখে তার ওপর বসে পড়লো,যাতে পাছার ওপর চাপও কম পড়ে আর কিছু হয়ে গেলে যেন বুয়ার বালিশটাই নষ্ট হয়।
শ্রদ্ধেয় মলয় রায়চৌধুরী,
নমস্কার।আপনাকে এ পর্যন্ত আমি ২২ টি চিঠি লিখেছি।আর এটিই হবে আপনাকে লেখা আমার শেষ চিঠি।আগের চিঠিগুলোতেই আমি আপনাকে সবকিছু জানিয়ে দিয়েছি এবং আমার পরিস্থিতি বোঝানোরও চেষ্টা করেছি।কিভাবে আমি আপনার বড় দাদা সমীর রায়চৌধুরীর ফেলে দেয়া ডাইরিটি আমার বাবার কাছ থেকে পাই,কিভাবে আমি একজন হাংরিয়ালিস্ট হই,কিভাবে আমি হাই প্রোফাইল সিরিয়াল কিলিং এর মাধ্যমে হাংরি জেনারেশনকে মিডিয়াতে প্রচার করতে চাই তা আপনার সবটাই জানা।আপনারা যদি অহিংস আন্দোলন ছেঁড়ে সহিংস পথ বেছে নিতেন সেই ষাটের দশকে তাহলে আমাকে আমার জীবনটা এভাবে উৎসর্গ করতে হতো না।আমি অনেক ভেবে দেখেছি যতদিন পর্যন্ত আমি এ দেশের প্রতিটি তরুন কবিকে হাংরি আন্দোলনের মতবাদ সম্পর্কে জানাতে পারবো না ততদিন পর্যন্ত কবিতার ধারা বদলাবে না।প্রতিটি কবিকে নষ্ট হতে হবে,পথভ্রষ্ট হতে হবে তা নাহলে কবিতা লিখে লাভ নেই।কারণ পৃথিবীটাই তো এখন নষ্ট হয়ে গেছে।এখন আমি পুলিশের হাতে ধরা পড়লেই আমি মিডিয়াতে হাংরি জেনারেশনের কথা তুলে ধরবো।আর মিডিয়ার মাধ্যমেই সব কবি-সাহিত্যিকের কাছেও আমার কথা তুলে ধরতে পারবো।আমার মৃত্যুদণ্ড হয়ে যাবে নিশ্চিত তাই আপনাকে আমি দায়িত্ব দিয়ে গেলাম এপার বাংলার পরবর্তী সাংস্কৃতিক অচলাবস্থা সম্পর্কে তীব্র দৃষ্টি রাখার জন্য এবং হাংরি জেনারেশনকে এক নতুন মাত্রা দেয়ার জন্য।আশা করি আপনি আমার অনুরোধ রাখবেন। আমি আপনার বোম্বের ঠিকানাটা পেয়েছি অনেক খোঁজার পর।তাই সবগুলো চিঠি আপনাকে একসাথে পাঠিয়ে দিচ্ছি।আমি একজন হাংরিয়ালিস্ট হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছি মলয় রায়,এখন আপনার পালা।
ইতি
হাংরিয়ালিস্ট
(মানুষের বাচ্চা.খ)
মলয় রায় ব্যালকনিতে গা এলিয়ে বসে আছেন।পত্রিকা পড়া আপাতত শেষ তাই তিনি আঙুল দিয়ে আয়েশ করে নাক খুঁটছেন।তারপর ময়লা বের করে আশেপাশে তাকিয়ে টুপ করে মুখে পুরে দিচ্ছেন।ইদানিং ময়লার সাথে পাকা চুলও চলে আসে তাই তিনি প্রায়শই বিরক্ত হন।
“কত্তা একটা চিঠি এসেছে যে।”,হঠাৎ করেই কালিপদের কণ্ঠস্বরে কেঁপে উঠলেন মলয় রায়। “ঐ শালা বাঞ্চোত,শব্দ করে আসতে পারিস না।যা এখন এখান থেকে।”নাক-মুখ খিঁচিয়ে বলে উঠলেন তিনি।
“আজ্ঞে,চিঠি টা?”
“হ্যাঁ,দিয়ে যা।”
মলয় রায় চিঠি দেখে যারপরনাই বিরক্ত হলেন তার সাথে বিস্মিতও।যেই পাগলটার চিঠিগুলো তাকে ভয় পাইয়ে তটস্থ করে রেখেছিল এতদিন সেই পাগলটার তো ফাঁসি ই হয়ে গেলো কয়দিন আগে,টিভিতে দেখেছিলেনও তিনি সেই খবর।এখন আবার চিঠি পাঠালো কে?তিনি কাঁপা কাঁপা হাতে খুলতে লাগলেন চিঠির খাম…
শ্রদ্ধেয় মলয় রায়চৌধুরী,
নমস্কার।কেমন আছেন?আছেন?আশা করি ভালো।আমাকে আপনি চিনবেন না কারণ আপনার সাথে আমার পরিচয় নাই।দেখা হবার সম্ভাবনাও অত্যন্ত ক্ষীণ।আপনি জানলে হয়তো খুশী হবেন যে আমি আপনার হাংরি জেনারেশন মতবাদের একনিষ্ঠ ভক্ত।আমি ঢাকায় তথা বাংলাদেশে এ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে ইচ্ছুক।কেননা আমাদের এপার বাংলায় কবিতা এক সরলরৈখিক পথে চলতে শুরু করেছে।রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দের দেখানো বাংলা যে কবেই বিলুপ্ত হয়েছে তা এখনকার তরুন কবিরা ভুলতে বসেছে।তারা এখনো বৃষ্টি,প্রকৃতি,প্রিয়তমা এদের নিয়ে কবিতা লিখতে ব্যস্ত।আর ছাপাখানায় এইসব কবিতাই অহরহ ছাপা হচ্ছে।আমার মতো যারা আধুনিক কবিতায় বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ করতে চাইছে তাদেরও নানাভাবে বাঁধা দেয়া হচ্ছে।এ ব্যাপারে আপনার মতামত একান্ত কাম্য।আমি নিজেকে এখন একজন হাংরিয়ালিস্ট হিসেবে পরিচয় দিতে চাই যদিও আমাদের এপার বাংলায় আপনার হাংরি জেনারশন মতবাদ সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানে।তাই এটাই সবচেয়ে ভালো সময় এখানে এ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার।১৯৬৫ তে যে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল সেটাকে কি আবার পুনর্জীবিত করে তোলা যায়না?আপনার ঠিকানা আমার কাছে নাই তাই এই চিঠি আপাতত আপনাকে দিতে পারছি না।তবে খুব শীঘ্রই আপনার ঠিকানা যোগাড় করে আমি আমার চিঠিখানা আপনার কাছে পৌছে দেবো।কারণ আপনার মতামত জানা আমার জন্য খুবই জরুরি।
ইতি,
হাংরিয়ালিস্ট
কালিপদ দূর থেকেই দেখলো তার কর্তা চিঠিখানা পড়েই অজ্ঞান হয়ে চেয়ার থেকে পড়ে গেছেন।কালিপদের উঠতে ইচ্ছে করছে না।পড়ে থাকুক বুড়ো আরও কিছুক্ষন।পরে যেয়ে সবাইকে বলা যাবে ক্ষণ…
(মানুষের বাচ্চা.গ)
হাতে লেগে থাকা রক্ত কোনমতেই ওঠানো যাচ্ছে না।এমনভাবে শুকিয়ে লেগে গেছে যে আফজালুর রহমান কসমস সাবান একটা ডলে শেষ করেও পুরোপুরি ওঠাতে পারছেন না।নখের আগায় তো এখনো লেগে আছে। সমীরণের ফাঁসি হয়েছে দুই মাস হলো,আফজালুর রহমানই সেই কেসের ইনচার্জ ছিলেন,প্রোমোশনও হয়েছে তার কয়দিন হয়।
“ধুস…সালা”,আফজাল হাল ছেঁড়ে কল বন্ধই করে দিলেন।খাতা-কলম নিয়ে বসে পড়লেন তিনি।সেই সকাল থেকেই একটা কবিতা মাথায় ঘুরছে তার কিন্তু এক মাগী প্রকাশককে খুন করতে গিয়েই সব ভজঘট হয়ে গেছে।“আমার কবিতা ছাপবেনা!সাহস কতবড়…কিন্তু এখন নতুন কবিতাই তো মাথায় প্যাচ খেয়ে গেছে।সমীরণ যে কিভাবে পারতো?”,নিজেকেই যেন জিজ্ঞেস করলেন আফজাল।বুঝতে পারলেন হাংরিয়ালিস্ট হতে এখনো আরও সাধনা করতে হবে তাকে…আরও অনেক সাধনা।
………………………………………সমাপ্ত……………………………………
[১৯৬৪ সালে মলয় রায়চৌধুরী তার “প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার” কবিতাটির জন্য অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত হয়ে গ্রেফতার হন।পরবর্তীতে তিনি মুক্তি পেলেও “হাংরি আন্দোলন” এর কার্যত সেখানেই সমাপ্তি ঘটে।তিনি বর্তমানে মুম্বাই এ বসবাস করেন তার পরিবারের সাথে।“হাংরিয়ালিস্ট” গল্পে তার ঘটনাটি পুরোটাই কাল্পনিক।]
-মেহেদী হাসান মুন
(রচনাকাল- ১৩ মে,২০১৩)
Subscribe to:
Posts (Atom)