Friday, July 27, 2018

হাংরি আন্দোলনে অধুনান্তিক ধারার সূত্রপাতের কথা ভুলে যান ঈর্ষান্বয়ী সমালোচকরা

জেব্রা, প্রতিদ্বন্দ্বী, চিহ্ণ, উন্মার্গ, ক্ষুধার্ত, ক্ষুধার্ত খবর, কনসেনট্রেশান ক্যাম্প, ধৃতরাষ্ট্র ইত্যাদি লিটল ম্যাগাজিনকে কেন্দ্র করে ষাটের দশকে হাংরি আন্দোলনকারীরা অধুনান্তিক চিন্তাধারাকে প্রকাশ করেন, এবং সেগুলিকে অধুনান্তিক হিসাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এখন।
যে বৈশিষ্ট্যগুলির কথা তাঁরা বলেছেন তা হাংরি আন্দোলনকারীদের রচনায় পাওয়া যাবে ।
১। বিষয়কেন্দ্রিকতার অভাব। অধুনান্তিক কবিতায় কোনো নির্দিষ্ট বিষয়কেন্দ্র, ভাবনাকেন্দ্র, central theme নেই
২। পোস্টমডার্ন কবিতায় যুক্তিকাঠামোর অনুক্রম অনুপস্থিত থাকবে। কবিতাটি close ended হবে। কবিতা শেষ হলেও মনে হবে তা শেষ হয় নি।
৩। অধুনান্তিক কবিতা বহুরৈখিক, বহুকৌণিক, বহুত্ববাদী ও বিদিশাময়। যে কোনো দিকে ছড়িয়ে পড়ার অভিমুখ খোলা।
৪। সাম্রাজ্যবাদী চিন্তা-চেতনা থেকে উত্তরাধিকার সূত্র প্রাপ্ত আধুনিক কবিতা ছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক। অধুনান্তিক কবিতায় সেই আমি-র অনুপস্থিতি।
৫। জীবনের যে কোনো এলাকা থেকে অধুনান্তিক কবিতায় কবি তার মালমশলা বা উপাদান সংগ্রহ করে নিতে পারেন। এটা কবিতায় চলবে না ওটা কবিতায় চলবে না এই মান্যতা কবি বা পাঠক আর গ্রাহ্য করেন না।
৬। পোস্টমডার্ন কবি জানেন বাস্তবকে নকল করা যায় না। ফলে পোস্টমডার্ন হাইপাররিয়েলিটি সৃষ্টি করে চলেছে।
৭। অনেকেই আজকাল কবিতাটিকে এমনভাবে শেষ করেন যাতে বোঝা যায় কবিতাটি অসমাপ্ত।
৮। জীবনের যে কোনো বাকফসলই ডিসকোর্স। আধুনিক কবিতায় এই ডিসকোর্সের ডিকনস্ট্রাকশন বা অবিনির্মাণ করা হয়।
৯। অধুনান্তিক কবিতায় প্রতীক এড়িয়ে যাওয়া বা প্রতীক ভেঙে যাওয়ার ঝোঁক।
১০। অধুনান্তিক কবিতা কোনো আদর্শ খাড়া করতে চায় না। সে কোনো যাত্রার সংকেত দেয়।
১১। অধুনান্তিক সম্ভাবনার পরিসর খোলা থাকে। হিউরোটোপিয়ার কথা বলে।
১২। অধুনান্তিকতা কোনো পূর্বনির্ধারিত তত্ত্ব নয়। জীবনকে দেখে শুনে তার লক্ষণগুলোর যোগসূত্র ঠাউরে নিয়ে অধুনান্তিকতার যাত্রার ঝুলি। অধুনান্তিকতা কোনো আন্দোলন নয়, একটি কালখণ্ডের প্রবণতা।
১৩। পোস্টমডার্ন কবিতায় ভাষার নিজস্ব গুরুত্ব মান্য করা হয়।
১৪। পোস্টমডার্ন কবিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ যুক্তিফাটল বা লজিক্যাল ক্র্যাক বা লজিক্যাল ক্লেফটের
উপস্থিতি।
১৫। আধুনিকতা যদি সাজানো বাগান হয় তাহলে পোস্টমডার্ন কবিতা হলো রাইজোম্যাটিক অর্থাৎ ঘাসের মতো।
১৬। পোস্টমডার্ন কবিতায় ইমেজ তৈরি সম্ভব নয়।
১৭। পোস্টমডার্ন কবিতা যে কোনো সীমাকে ছাপিয়ে যেতে চায়। ফলে কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় তাকে ধরে রাখা সম্ভব নয়।
১৮। কবির রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে কবিতাকে যুক্ত করা সম্ভব নয়।
১৯। পোস্টমডার্ন কবিতা অভেদ, অখণ্ডতা মহাসাম্যের দ্বারা প্রতিস্থাপিত। বাইনারি অপোজিট বা বৈপরীত্যবাদ দিয়ে তাকে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়।
২০। আধুনিক কবিতায় ছিল হিউম্যানিস্ট চেতনার প্রতিফলন। সেখানে মানুষের জয়গান গাওয়া হয়েছে। আজ কীট-পতঙ্গ, পশুপাখি, গুল্মলতা, কাপ-ডিস-চামচ, ফ্রিজ, ডিনার, টেবিল, এসট্রে, নাকছাবি, ওয়েবসাইট, আলুচাষ, যতিচিহ্ন সবই কবিতার বিষয়। একটিমাত্র দিক তার লক্ষ্য নয়। কবি বিদিশামণ্ডল।

No comments:

Post a Comment