আপেল মাহমুদ : আনন্দবাজার ও হাংরি আন্দোলন
আনন্দবাজার
খুব বড় কোন পত্রিকা কি? আমরা কেন বারবার আনন্দবাজারের সংবাদকে খুব বেশি
পাত্তা দিয়ে ফেলি? আনন্দবাজারতো হরহামেশাই আমাদের আজে বাজে অনলাইন
পত্রিকাগুলোর মত নিউজ করে।
এইতো গত ২০ জুনের ঘটনা। হঠাৎ করে লক্ষ্য করলাম আনন্দবাজার নিউজ শিরোনাম
করেছে 'নেইমারের শাস্তি কমে এক ম্যাচ'। সংবাদ পড়ে দেখলাম কলম্বিয়ার সাথে
ব্রাজিলের ম্যাচে নেইমার জুনাগাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে লালকার্ড খাবার
শাস্তি কমে এক ম্যাচ করা হয়েছে। অথচ তখনো আমাদের চ্যানেলগুলো নেইমারের চার
ম্যাচ নিষিদ্ধের খবর জানানো হচ্ছে। আমি শিওর হবার জন্য কয়েকজন ক্রীড়া
রিপোর্টারকে ফোন দিলাম। সব শেষে শিওর হলাম আনন্দবাজারের নিউজটি সঠিক নয়।
এমনকি সেই ভূয়া সংবাদটি তারা এখনো সরিয়ে নেয়নি বা সংশোধন করেনি।
গত ২২ জুন একটা সংবাদে আনন্দবাজার লিখল বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি নাকি দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ জয়ের রাতে মুস্তাফিজুরকে নিয়ে গিয়েছিলেন ধোনীর রুমে। সেখানে মুস্তাফিজের আইপিএল দরজা খোলার সম্ভাবনা আছে কি না তা ধোনীর কাছে জানতে চান মাশরাফি। এমনকি ধোনির কাছে একটা ব্যাটও নাকি চেয়েছেন দেশের এক নবীন প্রতিভাকে উত্সাহিত করতে। ডাহা এই মিথ্যা কথাটা তারা কি করে লিখল? অদ্ভূত! এমনকি সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি মুস্তাফিজকে ধোনীর রুমে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে সাংবাদিকদের জানানোর পরেও আনন্দবাজার ভুল সংবাদটির জন্য ক্ষমা চায়নি এমনকি সংশোধনও করেনি।
২২ জুনেরই আরেকটা সংবাদে আনন্দবাজার লিখলো বাংলাদেশীরা নাকি সুধীর গৌতমের উপর হামলা করেছে, পাথর নিক্ষেপ করেছে। অথচ সুধীর নিজেই জানিয়েছে তাকে কেউ পাথর নিক্ষেপ করেনি, আঘাতও করেনি। এমনকি তার সাথে যা হয়েছে সেটাকে মোটেও 'হামলা' শব্দ ব্যবহার উপযোগি কোন ঘটনা বলা যাবেনা।
গত ৬ জুনের আরেকটা সংবাদ শৈলেন সরকার নামের একজন সাংবাদিক 'হাংরি জেনারেশন রচনা সমগ্র' বুক রিভিউ লিখতে গিয়ে স্বয়ং মলয় রায়চৌধুরীর অবদানকে খাটো করেছেন। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে শৈলেন সরকার মলয়'দার 'প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার' কবিতাটিকে 'প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক কুঠার' বলে লিখেছেন। বলাই বাহুল্য যে কবিতার জন্য মলয়'দার বিরুদ্ধে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার মামলা করেছিল সেই কবিতার নামটা পর্যন্ত ঠিকভাবে জানেনা, তারা অাবার সাংবাদিক! আর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় এই যে মলয়'দা এই বিষয়টি নিজের ফেসবুকে খুব কঠোরভাবে লেখার পরেও আনন্দবাজার এখনো কোন ক্ষমা চায়নি এমনকি তাদের অনলাইন ভার্সনেও কবিতার নামটি সংশোধন করেনি
।
আমার কোলকাতার বন্ধুদের মুখেই শুনেছি ওরা আনন্দবাজারের সংবাদকে এতটাও গুরুত্ব দেয়না যতটা গুরুত্ব দেই আমরা বাংলাদেশীরা। তাই বলি কি, অনেক হইছে। আর না। এক জুন মাসেই যে পত্রিকাটি এত এত ভুল করে সেই পত্রিকার সারা বছরের নিউজ ঘাটলে ভুলের পাহাড় বের করা যাবে। তাই এই দায়িত্বজ্ঞানহীন নিম্নমানের পত্রিকাটির সংবাদ নিয়ে আর লাফালাফি না করি। পাগল পাগলের প্রলাপ বকতে থাকুক।
গত ২২ জুন একটা সংবাদে আনন্দবাজার লিখল বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি নাকি দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ জয়ের রাতে মুস্তাফিজুরকে নিয়ে গিয়েছিলেন ধোনীর রুমে। সেখানে মুস্তাফিজের আইপিএল দরজা খোলার সম্ভাবনা আছে কি না তা ধোনীর কাছে জানতে চান মাশরাফি। এমনকি ধোনির কাছে একটা ব্যাটও নাকি চেয়েছেন দেশের এক নবীন প্রতিভাকে উত্সাহিত করতে। ডাহা এই মিথ্যা কথাটা তারা কি করে লিখল? অদ্ভূত! এমনকি সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি মুস্তাফিজকে ধোনীর রুমে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে সাংবাদিকদের জানানোর পরেও আনন্দবাজার ভুল সংবাদটির জন্য ক্ষমা চায়নি এমনকি সংশোধনও করেনি।
২২ জুনেরই আরেকটা সংবাদে আনন্দবাজার লিখলো বাংলাদেশীরা নাকি সুধীর গৌতমের উপর হামলা করেছে, পাথর নিক্ষেপ করেছে। অথচ সুধীর নিজেই জানিয়েছে তাকে কেউ পাথর নিক্ষেপ করেনি, আঘাতও করেনি। এমনকি তার সাথে যা হয়েছে সেটাকে মোটেও 'হামলা' শব্দ ব্যবহার উপযোগি কোন ঘটনা বলা যাবেনা।
গত ৬ জুনের আরেকটা সংবাদ শৈলেন সরকার নামের একজন সাংবাদিক 'হাংরি জেনারেশন রচনা সমগ্র' বুক রিভিউ লিখতে গিয়ে স্বয়ং মলয় রায়চৌধুরীর অবদানকে খাটো করেছেন। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে শৈলেন সরকার মলয়'দার 'প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার' কবিতাটিকে 'প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক কুঠার' বলে লিখেছেন। বলাই বাহুল্য যে কবিতার জন্য মলয়'দার বিরুদ্ধে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার মামলা করেছিল সেই কবিতার নামটা পর্যন্ত ঠিকভাবে জানেনা, তারা অাবার সাংবাদিক! আর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় এই যে মলয়'দা এই বিষয়টি নিজের ফেসবুকে খুব কঠোরভাবে লেখার পরেও আনন্দবাজার এখনো কোন ক্ষমা চায়নি এমনকি তাদের অনলাইন ভার্সনেও কবিতার নামটি সংশোধন করেনি
।
আমার কোলকাতার বন্ধুদের মুখেই শুনেছি ওরা আনন্দবাজারের সংবাদকে এতটাও গুরুত্ব দেয়না যতটা গুরুত্ব দেই আমরা বাংলাদেশীরা। তাই বলি কি, অনেক হইছে। আর না। এক জুন মাসেই যে পত্রিকাটি এত এত ভুল করে সেই পত্রিকার সারা বছরের নিউজ ঘাটলে ভুলের পাহাড় বের করা যাবে। তাই এই দায়িত্বজ্ঞানহীন নিম্নমানের পত্রিকাটির সংবাদ নিয়ে আর লাফালাফি না করি। পাগল পাগলের প্রলাপ বকতে থাকুক।
শুজা মাহমুদ : হাংরি জেনারেশন আন্দোলন আছে, থাকবে
Hungryalist movement // হাংরি জেনারেশন // হাংরি জেনারেশন আন্দোলন
একটি সতর্কবাণী : এই শিরোনামের পোস্ট গুলি বয়স নয় মনন ও চিন্তায় যারা প্রাপ্ত বয়স্ক শুধু মাত্র তাদের জন্য।
রফিক ভাই, হাংরি জেনারেশন, ষাটের দশকের একটি মুছে যাওয়া আধ্যায়, তুলে এনেছেন সম্প্রতি তাঁর টাইম লাইনে । এই প্রসঙ্গে আমরা পরস্পরের সাথে আলাপ-চারিতায় আমাদের কৈশরে ফিরে গিয়েছি এবং স্মৃতি চারণ করেছি। মুরাদ জানতে চেয়েছে হাংরি জেনারেশনের কথা। বাংলায় ( উভয় বাংলায় ) কবিদের মধ্যে এখন আর শোনা যায় না, ষাটের দশকের প্রথমার্ধের সেই আন্দোলনের কথা। অথচ পশ্চিম বঙ্গে এবং বিশ্ব সাহিত্যের পরিমণ্ডলে এখনও আলোচিত হচ্ছে কোলকাতার Hungryalist Movement সম্পর্কে। ২০১৪-১৫ তে বিবিসি একটি ডকুমেণ্টারি প্রচার করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রে এবং ভারতের সাহিত্য সম্পর্কিত পত্র পত্রিকায় এই সেদিনও লেখা লেখি হয়েছে ও হচ্ছে সেই দ্রোহ কালের কবি ও কবিতাবলি নিয়ে। সিনেমা হচ্ছে অথবা সিনেমার কাহিনীতে সংযোজিত হচ্ছে দ্রোহী কবিদের কবিতা ( সেন্সরড ) ।
হাংরি জেনারেশন নিয়ে পোস্ট একটি পর্বে শেষ হবে না। তাই প্রথম পর্বে কবিতা ও গান ( বাইশে শ্রাবণ ছবিটি ওই থিমে তৈরি ও কবিতার অংশ বিশেষ সে সময়ের ) দিলাম। পরের পর্বে বিভিন্ন ওয়েবসাইট হাতড়ানো-লব্ধ তথ্যাদি, আমার ক্ষুদ্র জানা ও ধারনা থেকে লেখার চেষ্টা থাকবে। মলয় চৌধুরীর ছবি ( সিনেমা )-টা আপলোডের চেষ্টা করবো সেই সাথে। এতদসম্পর্কিত জানা তথ্য ও চিন্তা ভাবনা বিনিময়ের জন্য সকলের কাছে বিনীত আহ্বান রইলো । বিনয়ের সাথে আরেকটি স্বীকারোক্তি, যে জলে ডুব সাঁতার দিয়ে মুক্তা খুজবেন, হয়তো দেখবেন আমিও সেখানে ডুব সাঁতার দিচ্ছি। আমি সে জন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
একটি সতর্কবাণী : এই শিরোনামের পোস্ট গুলি বয়স নয় মনন ও চিন্তায় যারা প্রাপ্ত বয়স্ক শুধু মাত্র তাদের জন্য।
রফিক ভাই, হাংরি জেনারেশন, ষাটের দশকের একটি মুছে যাওয়া আধ্যায়, তুলে এনেছেন সম্প্রতি তাঁর টাইম লাইনে । এই প্রসঙ্গে আমরা পরস্পরের সাথে আলাপ-চারিতায় আমাদের কৈশরে ফিরে গিয়েছি এবং স্মৃতি চারণ করেছি। মুরাদ জানতে চেয়েছে হাংরি জেনারেশনের কথা। বাংলায় ( উভয় বাংলায় ) কবিদের মধ্যে এখন আর শোনা যায় না, ষাটের দশকের প্রথমার্ধের সেই আন্দোলনের কথা। অথচ পশ্চিম বঙ্গে এবং বিশ্ব সাহিত্যের পরিমণ্ডলে এখনও আলোচিত হচ্ছে কোলকাতার Hungryalist Movement সম্পর্কে। ২০১৪-১৫ তে বিবিসি একটি ডকুমেণ্টারি প্রচার করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রে এবং ভারতের সাহিত্য সম্পর্কিত পত্র পত্রিকায় এই সেদিনও লেখা লেখি হয়েছে ও হচ্ছে সেই দ্রোহ কালের কবি ও কবিতাবলি নিয়ে। সিনেমা হচ্ছে অথবা সিনেমার কাহিনীতে সংযোজিত হচ্ছে দ্রোহী কবিদের কবিতা ( সেন্সরড ) ।
হাংরি জেনারেশন নিয়ে পোস্ট একটি পর্বে শেষ হবে না। তাই প্রথম পর্বে কবিতা ও গান ( বাইশে শ্রাবণ ছবিটি ওই থিমে তৈরি ও কবিতার অংশ বিশেষ সে সময়ের ) দিলাম। পরের পর্বে বিভিন্ন ওয়েবসাইট হাতড়ানো-লব্ধ তথ্যাদি, আমার ক্ষুদ্র জানা ও ধারনা থেকে লেখার চেষ্টা থাকবে। মলয় চৌধুরীর ছবি ( সিনেমা )-টা আপলোডের চেষ্টা করবো সেই সাথে। এতদসম্পর্কিত জানা তথ্য ও চিন্তা ভাবনা বিনিময়ের জন্য সকলের কাছে বিনীত আহ্বান রইলো । বিনয়ের সাথে আরেকটি স্বীকারোক্তি, যে জলে ডুব সাঁতার দিয়ে মুক্তা খুজবেন, হয়তো দেখবেন আমিও সেখানে ডুব সাঁতার দিচ্ছি। আমি সে জন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
উত্তম দত্ত : হাংরি জেনারেশনের গুলি খাওয়া বাঘ মলয় রায়চৌধুরী
হাংরি
জেনারেশনের গুলি খাওয়া বাঘ মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের
একটি পত্র , যা গত শতাব্দীর ষাটের দশকের বাংলা সাহিত্যের একটি বিতর্কিত
ঐতিহাসিক বাতাবরণের জীবন্ত দলিল । পত্রটির জন্য ঋণী রইলাম ডঃ উত্তম দাশের
কাছে । পড়ুন -----
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর চিঠি ( মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা )
আয়ওয়া
১০ জুন ১৯৬৪
মলয়,
তুমি কলকাতায় কী সব কাণ্ডের বড়াই করে চিঠি লিখেছ জানি না। কী কান্ড করছ ? আমার বন্ধুবান্ধবদের কেউ-কেউ ভাসাভাসা লিখেছে বটে কফিহাউসে কী সব গণ্ডোগোলের কথা।
কিছু লেখার বদলে আন্দোলন ও হাঙ্গামা করার দিকেই তোমার লক্ষ্য বেশি। রাত্রে তোমার ঘুম হয় তো ? এ-সব কিছু না --- আমার ওতে কোনো মাথাব্যথা নেই। যত খুশি আন্দোলন করে যেতে পারো --- বাংলা কবিতার ওতে কিছু আসে যায় না। মনে হয় খুব একটা শর্টকাট খ্যাতি পাবার লোভ তোমার। পেতেও পারো বলা যায় না। আমি এসব আন্দোলন কখনো করিনি, নিজের হৃৎস্পন্দন নিয়ে আমি এতই ব্যস্ত।
তবে, একথা ঠিক, কলকাতা শহরটা আমার। ফিরে গিয়ে আমি ওখানে রাজত্ব করব। তোমরা তার একচুলও বদলাতে পারবে না। আমার বন্ধুবান্ধবরা অনেকেই সম্রাট। তোমাকে ভয় করতুম, যদি তোমার মধ্যে এখন পর্যন্ত একটুও জেল্লা দেখতে পেতুম। আমার চেয়ে কম বয়সিদের মধ্যে একমাত্র তন্ময় দত্ত এসেছিল, আমার চেয়ে অন্তত ছ বছরের ছোটো--- কিন্তু জীবনানন্দের পর অত শক্তিশালী কবি এদেশে আর কেউ আসেনি। প্রচণ্ড অভিমান করে ও চলে গেছে। সেজন্যে এখনও আমি অপরের হয়ে অনুতাপ করি। আমি নিজে তো এখনও কিছুই লিখিনি, লেখার তোড়জোড় করছি মাত্র, কিন্তু তোমার মতো কবিতাকে কমার্শিয়াল করার কথা আমার কখনো মাথায় আসেনি। বালজাকের মতো আমি আমার ভোকাবুলারি আলাদা করে নিয়েছি কবিতা ও গদ্যে। তোমার প্রতি আমার যতই স্নেহ থাক মলয়, কিন্তু তোমার কবিতা সম্বন্ধে এখনো কোনোরকম উৎসাহ আমার মনে জাগেনি। প্রতীক্ষা করে আছি অবশ্য।
অনেকের ধারণা যে পরবর্তী তরুণ জেনারেশনের কবিদের হাতে না রাখলে সাহিত্যে খ্যাতি টেকে না। সে জন্যে আমার বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে কেউ-কেউ একসময় তোমাদের মুরুব্বি হয়েছিল। আমি ওসব গ্রাহ্য করি না। নিজের পায়ে আমার যথেষ্ট জোর আছে, এমনকী একা দাঁড়াবার। আমার কথা হল : যে যে বন্ধু আছ, কাছে এসো, যে ভালো কবিতা লেখো কাছে এসো --- যে যে বন্ধু নও, বাজে কবিতা লেখো, দূর হয়ে যাও কাছ থেকে। বয়সের ব্যবধান তোলা আমার কাছে অত্যন্ত ভালগার লাগে।
চালিয়ে যাও ও সব আন্দোলন কিংবা জেনারেশনের ভণ্ডামি। আমার ওসব পড়তে কিংবা দেখতে মজাই লাগে। দূর থেকে। সাহিত্যের ওপর মৌরসি পাট্টা বসাতে এক-এক দলের অত লোভ কী করে আসে, কী জানি। তবে একটা কথা জানিয়ে রাখা ভালো। আমাকে দেখেছ নিশ্চয় শান্তশিষ্ট, ভালো মানুষ। আমি তাই-ই, যদিও গায়ে পদ্মাপারের রক্ত আছে। সুতরাং তোমাদের উচিত আমাকে দূরে-দূরে রাখা, বেশি খোঁচাখুঁচি না করা। নইলে, হঠাৎ উত্তেজিত হলে কী করব বলা যায় না। জীবনে ওরকম উত্তেজিত হয়েছি পৌনে একবার। গতবছর। দুএকজন বন্ধুবান্ধব ও-দলে আছে বলে নিতান্ত স্নেহবশতই তোমাদের হাংরি জেনারেশন গোড়ার দিকে ভেঙে দিইনি। এখনও সেক্ষমতা রাখি, জেনে রেখো। তবে এখনও ইচ্ছে নেই ও খেলাঘর ভাঙার।
আমার এক বন্ধু জানিয়েছে যে তোমরা নাকি আমার কোনো-কোনো চিঠির অংশবিশেষ ছাপিয়েছ। পত্রসাহিত্য-ফাহিত্য করার জন্য আমি চিঠি লিখি না। আমার চিঠি নেহাত কেজো কথা। অবশ্য লুকোবারও কিছু নেই। কিন্তু আগে-পরের কথা বাদ দিয়ে, ডটডট মেরে চালাকির জন্য আমার কোনো চিঠি কেউ ছাপিয়ে থাকে--- তবে আড়াই মাস পরে ফিরে তার কান ধরে দুই থাপ্পড় লাগাব বলে দিয়ো।
আশা করি শারীরিক ভালো আছ। আমার ভালোবাসা নিও।
সুনীলদা
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর চিঠি ( মলয় রায়চৌধুরীকে লেখা )
আয়ওয়া
১০ জুন ১৯৬৪
মলয়,
তুমি কলকাতায় কী সব কাণ্ডের বড়াই করে চিঠি লিখেছ জানি না। কী কান্ড করছ ? আমার বন্ধুবান্ধবদের কেউ-কেউ ভাসাভাসা লিখেছে বটে কফিহাউসে কী সব গণ্ডোগোলের কথা।
কিছু লেখার বদলে আন্দোলন ও হাঙ্গামা করার দিকেই তোমার লক্ষ্য বেশি। রাত্রে তোমার ঘুম হয় তো ? এ-সব কিছু না --- আমার ওতে কোনো মাথাব্যথা নেই। যত খুশি আন্দোলন করে যেতে পারো --- বাংলা কবিতার ওতে কিছু আসে যায় না। মনে হয় খুব একটা শর্টকাট খ্যাতি পাবার লোভ তোমার। পেতেও পারো বলা যায় না। আমি এসব আন্দোলন কখনো করিনি, নিজের হৃৎস্পন্দন নিয়ে আমি এতই ব্যস্ত।
তবে, একথা ঠিক, কলকাতা শহরটা আমার। ফিরে গিয়ে আমি ওখানে রাজত্ব করব। তোমরা তার একচুলও বদলাতে পারবে না। আমার বন্ধুবান্ধবরা অনেকেই সম্রাট। তোমাকে ভয় করতুম, যদি তোমার মধ্যে এখন পর্যন্ত একটুও জেল্লা দেখতে পেতুম। আমার চেয়ে কম বয়সিদের মধ্যে একমাত্র তন্ময় দত্ত এসেছিল, আমার চেয়ে অন্তত ছ বছরের ছোটো--- কিন্তু জীবনানন্দের পর অত শক্তিশালী কবি এদেশে আর কেউ আসেনি। প্রচণ্ড অভিমান করে ও চলে গেছে। সেজন্যে এখনও আমি অপরের হয়ে অনুতাপ করি। আমি নিজে তো এখনও কিছুই লিখিনি, লেখার তোড়জোড় করছি মাত্র, কিন্তু তোমার মতো কবিতাকে কমার্শিয়াল করার কথা আমার কখনো মাথায় আসেনি। বালজাকের মতো আমি আমার ভোকাবুলারি আলাদা করে নিয়েছি কবিতা ও গদ্যে। তোমার প্রতি আমার যতই স্নেহ থাক মলয়, কিন্তু তোমার কবিতা সম্বন্ধে এখনো কোনোরকম উৎসাহ আমার মনে জাগেনি। প্রতীক্ষা করে আছি অবশ্য।
অনেকের ধারণা যে পরবর্তী তরুণ জেনারেশনের কবিদের হাতে না রাখলে সাহিত্যে খ্যাতি টেকে না। সে জন্যে আমার বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে কেউ-কেউ একসময় তোমাদের মুরুব্বি হয়েছিল। আমি ওসব গ্রাহ্য করি না। নিজের পায়ে আমার যথেষ্ট জোর আছে, এমনকী একা দাঁড়াবার। আমার কথা হল : যে যে বন্ধু আছ, কাছে এসো, যে ভালো কবিতা লেখো কাছে এসো --- যে যে বন্ধু নও, বাজে কবিতা লেখো, দূর হয়ে যাও কাছ থেকে। বয়সের ব্যবধান তোলা আমার কাছে অত্যন্ত ভালগার লাগে।
চালিয়ে যাও ও সব আন্দোলন কিংবা জেনারেশনের ভণ্ডামি। আমার ওসব পড়তে কিংবা দেখতে মজাই লাগে। দূর থেকে। সাহিত্যের ওপর মৌরসি পাট্টা বসাতে এক-এক দলের অত লোভ কী করে আসে, কী জানি। তবে একটা কথা জানিয়ে রাখা ভালো। আমাকে দেখেছ নিশ্চয় শান্তশিষ্ট, ভালো মানুষ। আমি তাই-ই, যদিও গায়ে পদ্মাপারের রক্ত আছে। সুতরাং তোমাদের উচিত আমাকে দূরে-দূরে রাখা, বেশি খোঁচাখুঁচি না করা। নইলে, হঠাৎ উত্তেজিত হলে কী করব বলা যায় না। জীবনে ওরকম উত্তেজিত হয়েছি পৌনে একবার। গতবছর। দুএকজন বন্ধুবান্ধব ও-দলে আছে বলে নিতান্ত স্নেহবশতই তোমাদের হাংরি জেনারেশন গোড়ার দিকে ভেঙে দিইনি। এখনও সেক্ষমতা রাখি, জেনে রেখো। তবে এখনও ইচ্ছে নেই ও খেলাঘর ভাঙার।
আমার এক বন্ধু জানিয়েছে যে তোমরা নাকি আমার কোনো-কোনো চিঠির অংশবিশেষ ছাপিয়েছ। পত্রসাহিত্য-ফাহিত্য করার জন্য আমি চিঠি লিখি না। আমার চিঠি নেহাত কেজো কথা। অবশ্য লুকোবারও কিছু নেই। কিন্তু আগে-পরের কথা বাদ দিয়ে, ডটডট মেরে চালাকির জন্য আমার কোনো চিঠি কেউ ছাপিয়ে থাকে--- তবে আড়াই মাস পরে ফিরে তার কান ধরে দুই থাপ্পড় লাগাব বলে দিয়ো।
আশা করি শারীরিক ভালো আছ। আমার ভালোবাসা নিও।
সুনীলদা
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
No comments:
Post a Comment